আল্লাহ তাআলার পরিচয় ও তার সৃষ্টি
1 min readআল্লাহ তাআলার পরিচয় ও তার সৃষ্টি
নিশ্চয় মহান আল্লাহ তাআলা এক এবং তার কোনো শরিক নাই। তিনি সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি তার মতো, কেউই তার মতো নই। মহান আল্লাহ তাআলার সমতূল্য কেউ নাই। তিনি ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নাই। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুর প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার জন্য। তিনি চিরঞ্জীব, যার কোনো মৃত্যু নেই। তিনি চির জাগ্রত, যার কোন নিদ্রার প্রয়োজন হয় না। তার ইচ্ছা ব্যতীত কোনো কিছু সংঘটিত হয় না। তার কোনো ক্ষয় নেই, কোনো ধ্বংস নেই।
এই পৃথিবীতে যা কিছু সংঘটিত হয় একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশে হয়। তার জ্ঞান তাকে উপলদ্ধি করতে পারে না। তিনি একমাত্র সাহায্যকারী। তিনি জীবন ও মৃত্যু দানকারী। তিনি হলেন রব- যার অর্থ প্রতিপালক। মহান আল্লাহ তাআলার গুনবাচক নামের মধ্যে একটি নাম হলোঃ-খালিক, যার অর্থ সৃষ্টিকর্তা। পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বের মহান আল্লাহ তাআলা ছিলেন এবং পৃথিবী ধবংসের পরও তিনি থাকবেন।
মহান আল্লাহ তাআলা হলেন একমাত্র সৃষ্টিকর্তা যিনি হলেন বিচার দিনের মালিক। এছাড়াও তিনি হলেন রিজিক দাতা। তিনি ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেন এবং অসুস্থকে সুস্থতা দান করেন। তিনি অনাদি, যার কোন আদি নাই। সৃষ্টির বহু পূবেই তিনি তার অনাদি গুণাবলীসহ বিদ্যমান ছিলেন, আর সৃষ্টির কারণে তার কোনো নতুন গুনের সংযোজন ঘটেনি। তিনি তার গুণাবলীসহ যেমন অনাদি ছিলেন। তেমনি তিনি স্বীয় গুণাবলীসহ অনন্ত থাকবেন। তিনি সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান। প্রতিটি সৃষ্টি তার অনুগ্রহের ভিখারী। তিনি সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের জন্য সবকিছুর পরিমান নির্ধারণ করেছেন। আর তাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন মৃত্যুর সময়। মৃত্যুর পর তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন। সৃষ্ট জীবের সৃষ্টির পূর্বে কোনো কিছুই তার অজ্ঞাত ছিল না। জীব জগতের সৃষ্টির পূর্বেই তাদের সৃষ্টির পরবর্তীকালের কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি সম্যক অবহিত ছিলেন। তিনি তাদেরকে স্বীয় আনুগত্যের আদেশ দিয়েছেন। এবং বিরুদ্ধাচরণ করা হতে বারণ করেছেন। সবকিছুই তার ইচ্ছা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। আর তারই ইচ্ছা কার্যকর হয়। বান্দার কোনো ইচ্ছে বাস্তবায়িত হয় না। অতএব তিনি বান্দাদের জন্য যা চান তাই হয়। আর যা চান না তা হয় না। মহান আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছে তাকেই হিদায়েত দান করেন। আশ্রয় ও নিরাপত্তা দান করেন। এটা তার অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই অপমানিত করেন। এটা তার ন্যায় বিচার।
মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার চির কল্যাণময়ী। তিনি বান্দার জন্য সবসময় সহজ চান-কঠিন চান না। তিনি যার কল্যাণ চান তার জন্য ইসলামকে উন্মুক্ত করেন। মানুষ তার জ্ঞানের সামান্য পরিমানও আয়ত্ত করতে পারে না তবে তিনি যা চান তা ছাড়া। পৃথিবীর সবকিছু পরিবর্তিত হয়ে থাকে তার ইচ্ছায় ও তার অনুগ্রহ এবং সুবিচারের মাধ্যমে। তার নির্দেশ বাতিল করার কেউ নেই এবং তার নির্দেশকে পরাভূত করার কেউই নেই।
মহান আল্লাহ তাআলার পৃথিবী সৃষ্টিঃ–
আল্লাহ তাআলার পানি হতে ধূঁয়া এবং সেই ধূঁয়া হতে সাত আসমান সৃষ্টি করলেন। তারপর সেই পানিতে ফেনা সৃষ্টি হইল। রাসূল (স) বলিয়াছেন যে, সর্বপ্রথম কাবা গৃহের স্থানে ফেনা সৃষ্টি হইল। তারপর সেই ফেনা বিস্তৃত হতে শুরু করল। ক্রমশ সেই ফেনা পানির নিচে অনেক দূর পর্যন্ত জমাট হইল। তারপর সেই ফেনা জমিয়া মাটির রুপ ধারণ করল। কিন্তু যেহেতু গভীর পানির উপর মাটি জমাট বাঁধিল তাই উহা কাঁপতে শুরু করল। তখন মহান আল্লাহ তাআলা জমীনকে স্থির করার জন্য পাহাড় সৃষ্টি করলেন। মহান আল্লাহ তাআলার বলিয়াছেনঃউচ্চারণ : আল্লাহুল্লাযী জাআলা লাকুমুল আরদা কারাবান।অর্থঃ আল্লাহই এই জমীনকে তোমাদের জন্য স্থির করিয়াছেন। তাফসীর ও অনান্য কিতাবে লিখিত আছে, জমীনের উপর মহান আল্লাহ তাআলা ২৯ টি বৃহৎ পর্বত সৃষ্টি করিয়াছেন। এবং এইগুলো দ্বারা তিনি জমীন স্থির ও উহার ভারসাম্য বহাল রাখিয়াছেন। মহান আল্লাহ তাআলা কেবল একটি নয় এইরুপ সাতটি জমীন সৃষ্টি করেছেন।
তিনি পবিত্র কোরআনে বলিয়াছেন-
উচ্চারণ : আল্লাহুল্লাযী খালাকা সাবআ সামাওয়াতি ওয়ামিনাল আরদি মিছলাহুন্না।
অর্থঃ এবং আল্লাহই সাতটি আসমান সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আরও এইরুপ আল্লাহরই সৃষ্টি পৃথিবী রহিয়াছে। কিতাবে লিখিত আছে, পৃথিবী হতে আকাশ পাচঁ শত বৎসরের রাস্তা।
ফেরেস্তা সৃষ্টিঃ-
আল্লাহ তাআলা সাত আসমানে অসংখ্য ফেরেস্তা সৃষ্টি করেছেন। প্রথম আসমানের ফেরেস্তাগন ষাঁরের আকৃতি বিশিষ্ট। দ্বিতীয় আসমানের ফেরেস্তাগন বিচ্ছুর আকৃতি বিশিষ্ট।তৃতীয় আসমানের ফেরেস্তাগন খরগোশের আকৃতি বিশিষ্ট।চতুর্থ আসমানের ফেরেস্তাগন বড় বড় ঘোড়ার আকৃতি বিশিষ্ট।পঞ্চম আসমানের ফেরেস্তাগন নুরের আকৃতিতে প্রস্তুত।ষষ্ঠ আসমানের ফেরেস্তাগনকে বেহেশতের গেলমানে আকৃতিতে পয়দা করা হইয়াছে।এবং সপ্তম আসমানের ফেরেস্তাগন মানুষের আকৃতি বিশিষ্ট। এই সপ্তম আসমানের ফেরেস্তাগন একমাত্র আল্লাহ তাআলার সম্মুখে তাহারই এবাদতে এবং তসবীহ তাহলীলে নিয়োজিত রয়েছেন। কিছু সংখ্যক দারিয়া ও কিছু সংখ্যক সিজদায় পড়িয়া তসবীহ পরিতেছে। আবার কিছু সংখ্যক ফেরেস্তা তাহাদের নির্ধারিত কার্যে নিয়োজিত রহিয়াছে। ইহারা সকলেই নূরের তৈরি এবং তাহারা বিভিন্ন আকার ধারণ করতে পারে। তাদের কোনো ক্ষুদা-পিপাসা নেই। আল্লাহ তাআলার ইবাদত তাদের একমাত্র কর্ম। হাদীসের এক বর্ণনা হতে জানা যায় যে, খোদা তাআলা জ্বিন,মানুষ এবং ফেরেস্তা সৃষ্টি করিয়া উহাকে দশ ভাগে বিভক্ত করিয়াছেন। উহার নয় ভাগ ফেরেস্তা ও মাত্র এক ভাগ জ্বিন ও মানুষ।
জ্বীন জাতির সৃষ্টিঃ–
জ্বীন আল্লাহ তাআলার এক সৃষ্টি । ইহারা আগুনের তৈরি। আল্লাহ তাআলার তাদের সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ করিয়াছেন।
উচ্চারণ : ওয়ালজ্বাননু খালাক্বনাহু মিন ক্বাবলু মিন নারিছ ছামুম।
অর্থঃ জ্বিনকে আমি জ্বলন্ত অগ্নি শিখা দ্বারা পূর্বে পয়দা করিয়াছি।
আল্লাহ তাআলা যেহেতু ফেরেস্তাগণকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করিয়াছেন সেহেতু তারা খুব অনুগত এবং আল্লাহর ইবাদত-উপাসনার প্রতি খুবই আগ্রহী। এবং জ্বিন জাতি যেহেতু আগুনের সৃষ্টি সেইজন্য তাহাদের স্বভাব ও উগ্র, গর্বিত, ফলে তাহাদের এক শ্রেণী আল্লাহ তাআলার নাফরমানীতে লিপ্ত হইয়া পড়িয়াছিল। কিতাবে উল্লেখ আছে যে, খোদা তাআলা জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করিয়া এই পৃথিবীতে বাস করিতে দিয়েছিলেন।
সুতরাং তাহাদের সন্তানাদির সংখ্যা প্রচুর বাড়িয়া গেল। তখন তাহাদের প্রতি শরীয়ত ও তরিকদের পথ অনুসরণ করার এবং আল্লাহর তাবেদারী করার হুকুম দিলেন।
জ্বিন জাতি প্রথম পর্যায়ে আল্লাহর ইবাদত করলেও শেষের পর্যায়ে আল্লাহর নাফরমানী করা শুরু করল। একটা সময় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধবংস করিয়া দিলেন। ফলে সকল কাফের ও মুশরিক জ্বিন বিলীন হইয়া গেল।
জ্বিন জাতিকে আল্লাহ তাআলা অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করিয়াছেন। তারা পৃথিবী হতে আকাশ পর্যন্ত বিরাট জানোয়ারের আকৃতি ধারণ করতে পারে। আবার মুহুর্তে বায়ু হইয়া গায়েব হইতে পারে। আবার অগ্নির মত রুপ ধারণ করতে পারে। সুন্দর পুরুষ বা সুন্দরী নারীর রুপ ধারণ করতে পারে। এছাড়াও তারা বিভিন্ন প্রাণীর রুপ ধারণ করতে পারে। পৃথিবীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তারা মুহুর্তের মধ্যে ভ্রমণ করতে পারে।
রুহের সৃষ্টিঃ–
আকাশ, পৃথিবী এবং রুহের পৃথিবী বেষ্টন করিয়া খোদার আরশ রহিয়াছে। এ আরশে মুআল্লাহর চতুর্দিকে রুহ সকল দলে দলে মওজুদ রহিয়াছে। রুহের প্রতি লক্ষ্য করিয়া আল্লাহ তাআলা বলিলেনঃ
আমি কি তোমোদের প্রভু নহি? রুহগণ ইহার উত্তরে বলিল- নিশ্চয় আপনি আমাদের প্রভু। আপনি আমাদের পালনকর্তা। আমরা কখনও আপনাকে ভুলিব না। অতপর আল্লাহ তাআলা সকল রুহ লক্ষ্য করিয়া ফরমাইলেন- অইয়াকুলু ইয়াওমাল কিয়ামাতি ইন্না কুন্না আনহাযা গাফিলীন। আওতাকুলু ইন্নামা আশরাকা আবাউনা মিন কাবলু ওয়া কুন্না যুরবিরাতান মিম বা দিহিম।
অর্থঃ আল্লাহ সেই রুহদিগকে সতর্ক করিয়া বলেন, হে রুহগণ !
অবশেষে তোমরা কেয়ামতের দিন বলিতে না থাক যে আমরা এই বিষয়ে কিছুই জানিতাম না। কেহ আমাদিগকে সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে বলিয়াছে, তাহাকে কখনও ভুলিও না।
অথবা ইহা বলিতে থাক যে, আমাদের পিতা-মাতাগণ শেরেক করিয়াছে। আমরা তো তাদের পর তাদের সন্তান-সন্ততি।
কিন্তু এই দুনিয়াতে আসিয়া প্রভুকে মানুষগণ একেবারে ভুলিয়া যায়। মহান আল্লাহ তাআলা সেই দিন তাহাদের কোন ওজর-আপত্তি শুনিবেন না।