আল-কোরআনের আলোকে মানুষের মন্দ স্বভাব। Best Article
1 min readআল-কোরআনের আলোকে মানুষের মন্দ স্বভাব।
মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তার ইবাদতের জন্য। তিনি দুনিয়াতে অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন ও পবিত্র আল-কোরআন অবতীর্ণ করেছেন যাতে মানবজাতি সুপথের দেখা পায়। পবিত্র আল-কোরআনে আল্লাহ তা’আলা মানুষের ভালো স্বভাব উল্লেখ করে তা অনুসরণ করতে এবং মন্দ স্বভাব বর্ণনা করে তা পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের এমন কয়েকটি মন্দ স্বভাব নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
১. হতাশাগ্রস্ত হওয়াঃ
কোরআনের দৃষ্টিতে হতাশা পরিহারযোগ্য মন্দ স্বভাব। মানুষের এই স্বভাবের নিন্দা করে বলা হয়েছে, ‘যখন বিপদ তাকে স্পর্শ করে সে হয় হা-হুতাশকারী। আর যখন কল্যাণ স্পর্শ করে সে হয় অতি কৃপণ। (সুরা মাআরিজ, আয়াতঃ ২০–২১)
আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং দূরে সরে যায়। আর তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে যায়। (সুরাঃ বনি ইসরাঈল, আয়াতঃ ৮৩)
২. মুর্খতাঃ
মানুষের অজ্ঞতা ও মূর্খতা নিন্দনীয়। ইসলাম মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে বলেছে। ইরশাদ হয়েছে, আমি আসমান, জমিন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত পেশ করেছিলাম, তারা তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং তাতে শঙ্কিত হলো। কিন্তু মানুষ তা বহন করল, সে অতিশয় জালিম, অতিশয় অজ্ঞ। (সুরাঃ আহজাব, আয়াতঃ ৭২)
৩. ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়াঃ
ঝগড়া-বিবাদ মানুষের মন্দ স্বভাব যা পরিহার করা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, আমি মানুষের জন্য এই কোরআনে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। মানুষ বেশির ভাগ ব্যাপারেই বিতর্কপ্রিয়। (সুরাঃ কাহফ, আয়াতঃ ৫৪)
৪. শয়তানের ফাঁদে পা দেওয়াঃ
কোরআন ও হাদিসে অসংখ্যবার সতর্ক করার পরও মানুষ শয়তানের ফাঁদে পা দেয়, যা তার ইহকালীন ও পরকালীন বিপদের কারণ। ইরশাদ হয়েছে, আমাকে সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ পৌঁছানোর পর। শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সুরাঃ ফোরকান, আয়াতঃ ২৯)
৫. তাড়াহুড়া করাঃ
তাড়াহুড়া করা মানুষের অন্যতম স্বভাব। আল্লাহ তা’আলা তাড়াহুড়া পছন্দ করেন না। ইরশাদ হয়েছে, মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ, শিগগিরই আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি দেখাব। সুতরাং তোমরা আমাকে ত্বরা করতে বলো না। (সুরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ৩৭)
৬. অকৃতজ্ঞতাঃ
মানুষ তার স্রষ্টা ও তার উপকারী বন্ধুর প্রতি অকৃতজ্ঞ, যা নিন্দনীয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, তিনি তোমাদের দিয়েছেন তোমরা তাঁর কাছে যা কিছু চেয়েছ। তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই অতি মাত্রায় জালিম, অকৃতজ্ঞ। (সুরাঃ ইবরাহিম, আয়াতঃ ৩৪)
৭. আল্লাহকে ভুলে থাকাঃ
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ভুলে থাকা নিন্দনীয়। কোরআনে এ বিষয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছে, মানুষ বলে, আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় উত্থিত হব? মানুষ কি স্মরণ করে না যে আমি তাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি, যখন সে কিছুই ছিল না? (সুরাঃ মারিয়াম, আয়াতঃ ৬৬-৬৭)
৮. মিথ্যা কথা বলাঃ
মিথ্যাচার জঘন্যতম পাপ। আল্লাহ তা’আলা মিথ্যাকে শিরকের পরে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, সুতরাং তোমরা বর্জন করো মূর্তিপূজার অপবিত্রতা এবং দূরে থাকো মিথ্যা কথা-বার্তা থেকে। (সুরাঃ হজ, আয়াতঃ ৩০)
৯. অপচয় ও অপব্যয় করাঃ
অপচয় ও অপব্যয় দূষণীয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরা খাও ও পান করো, কিন্তু অপব্যয় করবে না। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না। (সুরাঃ আরাফ, আয়াতঃ ৩১)
১০. মৃত্যুকে স্বরণ না করাঃ
মানুষ পার্থিব জীবনে এমনভাবে চলাফেরা করে, যেন কোনো দিন তার মৃত্যু হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, আমি তোমার আগে কোনো মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি, সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে? জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যানীত হবে। (সুরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ৩৫)