ইবাদত বিমুখ হওয়া থেকে বের হবার উপায়।
1 min readইবাদত বিমুখ হওয়া থেকে বের হবার উপায়।
ইবাদত বিমুখ হওয়া থেকে বের হবার উপায়।
আমাদের প্রকাশ্য শত্রু শয়তান যার কাজ মুসলিমদের ধোঁকা দিয়ে ইবাদত থেকে দূরে রাখা। নানান ভাবে ওয়াস ওসার মাধ্যমে ইবাদত বিমুখ করে তোলা বিভিন্ন ধরনের অজুহাত বা মিথ্যা কথা দ্বারা ইবাদত না করার আনজাম প্রদান করা। এছাড়া রয়েছে আমাদের অন্তর শত্রু নফস যার ধোঁকাও আমাদের ইবাদত বিশাদের প্রধান কারণ।
একটা স্বাভাবিক বিষয় একজন মুমিন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে আমৃত্যু ইবাদত ও আমলের মধ্যে জীবন পার করবে। সুতরাং ইবাদত আমাদের করতেয় হবে এই জন্য মুমিনের করণীয় হলো, ইবাদতে বিরক্ত না হওয়া। ইবাদতে বিরক্ত না হওয়ার অর্থ হচ্ছে ইবাদতে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। কারণ সামর্থ্যের অতিরিক্ত আমল করা শুরু করলে কয়েক দিন পর সেটাতে ইবাদত বিমুখ চলে আসবে। তাই ইবাদতে মধ্যপন্থা অবলম্বন বাঞ্ছনীয়।
এই বিষয়ে নবী করিম (সা.) বলেন, হে আল্লাহর বান্দারা শুনে রাখ, তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করতে থাকো। কারণ আল্লাহ (সওয়াব দানে) ক্লান্তি বোধ করেন না, যতক্ষণ না তোমরা (আমল সম্পাদনে) ক্লান্ত হয়ে পড়ো। আর আল্লাহর কাছে ওই আমল সবচেয়ে প্রিয়, যা অল্প হলেও নিয়মিত করা হয়। (হাদিস নং: ৫৮৬১, বুখারি)
যেকোন কাজ প্রতিদিন করলে বিরক্তবোধ জাগ্রত হতে পারে তবে তা ইবাদতের ক্ষেত্রে নয় যদি সে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। ইবাদতে বিরক্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে আমল সম্পাদনে শৈথিল্য অনুভূত হওয়া। সামর্থ্যের বেশি অনুশীলনের কারণে এটা ঘটে। কখনো কখনো কারো কারো ক্ষেত্রে এটা হয়। তবে আমাদের ইসলামিক জ্ঞান অনেষন্ব চালিয়ে যেতে হবে নফল ইবাদত বৃদ্ধি করতে হবে। কোন প্রকার ইবাদত বিমুখ অবস্থা তৈরি হলে বার বার আল্লাহর নিকট পানাহা ও ইস্তেফার করতে হবে।
যেমন:– কেউ যদি ইবাদত বিমুখ কাটাতে তাহাজ্জুদ নামাজ শুরু করতে চায় এবং প্রথম পর্যায়েই দু-তিন ঘণ্টার কিয়ামুল লাইলে কঠোরভাবে আত্মনিয়োগ করে, তাহলে দেখা যাবে যে কয়েক দিন পর তার উদ্যমে ভাটা পড়বে এবং সে তাহাজ্জুদ ছেড়ে দেবে। সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং মধ্যপন্থা অবলম্বন করে ইবাদতে প্রবৃত্ত করা উচিত, যেন সেটা নিয়মিত সম্পাদন করা যায়, বিরক্তি না আসে এবং আগ্রহে ভাটা না পড়ে।
অনেক সময় গোপনে অথবা প্রকাশ্যে পাপের কারণে ইবাদতে বিরক্তি চলে আসে। সে জন্য ইবাদতে বিরক্তি আসার কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং তদনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি ঈমানি শক্তি ও শারীরিক সক্ষমতার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। কারো জন্য হয়তো তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া সহজ, আবার কারো জন্য সিয়াম পালন করা সহজ। আবার কেউ সব ক্ষেত্রেই সমানভাবে ইবাদত করতে সক্ষম।
হযরত আবু বকর (রা.) সব ইবাদতে সমানভাবে তৎপর ছিলেন। অন্যদিকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) শারীরিক দুর্বলতার কারণে সিয়াম কম রেখে তাহাজ্জুদ ও কোরআন তিলাওয়াতে বেশি সময় ব্যয় করতেন। এ ক্ষেত্রে নিজের সময়, শরীর ও সক্ষমতার আলোকে ভারসাম্য বজায় রেখে ইবাদত করতে হবে।
তবে ফরজ ইবাদতে কোনো বিরক্ত বা শীথিলতা প্রদর্শন করা যাবে না। তাই কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ ফরজ ইবাদতগুলোতে বিরক্তি অনুভব করে, কোরআন তিলাওয়াতে ক্লান্তি বোধ করে, তাহলে বুঝে নিতে হবে, বেশি পাপের কারণে তার হৃদয় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে, যার অন্তর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আর অন্তরের রোগব্যাধির প্রধান প্রতিষেধক হলো তাওবা-ইস্তিগফার ও কোরআন অনুধাবন করা।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবতীর্ণ করি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য আরোগ্য ও করুণা, কিন্তু তা সীমালংঘনকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।’ (সুরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)