প্রতিদিনের কাজকর্ম ইবাদতে পরিণত করা উপায়।
1 min readপ্রতিদিনের কাজকর্ম ইবাদতে পরিণত করা উপায়
প্রতিদিনের কাজকর্ম ইবাদতে পরিণত।
আমরা প্রতিদিন কোনো না কোনো কাজের ভিতরে লিপ্ত থাকি। জীবন-জীবিকার জন্য আমাদের প্রতিদিন কাজ করতে হয়। এর বাইরেও আমরা প্রতিদিন অনেক কাজকর্ম করে থাকি। কিন্তু প্রতিদিনের এই কাজকর্মগুলো যদি আমরা কুরআন, হাদিস ও রাসুল (সা.) এর নির্দেশ অনুসারে করে থাকি তাহলে আমাদের প্রতিদিনের কাজকর্মগুলো আল্লাহর আনগত্য পরিণত হবে। নিচে এমন কিছু প্রতিদিনের কাজকর্মের কথা বলা হলো যেগুলো কুরআন, হাদিস অনুসারে করলে তা আল্লাহর আনগত্যে পরিণত হবে।
উপার্জন বা আয় যখন ইবাদতঃ
জীবিকার জন্য আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের কাজ করে থাকি ও বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত থাকি। আর এই কাজগুলোর দ্বারা যদি হালাল উপার্জন হয়ে থাকে তাহলে এই উপার্জনই ইবাদতে পরিণত হবে। তাছাড়া ইবাদত কবুল হওয়ার প্রথম শর্ত হালাল উপার্জন।
হালাল উপার্জন সর্ম্পকে মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, হে মুমিনগণ তোমরা উত্তম ও হালাল রিজিক আহার করো যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি। (সুরা বাকারা-২, আয়াতঃ ১৭২)
সুতরাং রাসুল (সা.) এর সুন্নত অনুসারে হালাল উপার্জন করলে তা ইবাদতে গণ্য হবে।
ব্যয় যখন ইবাদতঃ
প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যয় করে থাকি। আর এই ব্যয় যদি পরিবারের সকলের ভরণ-পোষণের জন্য হয় তখন তা আল্লাহর আনগত্য এ পরিণত হয়। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান ও আত্নীয়স্বজনসহ গঠিত হয় আমাদের পরিবার।
রাসুল (সা.) বলেন, যখন কোন মুসলমান সওয়াবের আশায় পরিবারের জন্য খরচ করে থাকে তখন তার জন্য সদকা করার সমান সওয়াব তার আমলনামায় নির্ধারণ করা হয়। (মুসলিম, হাদিসঃ ১০০২)
খাদ্যগ্রহণ যখন ইবাদতঃ
আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজকর্ম নিয়তের উপর নির্ভশীল। বেঁচে থাকার তাগিদে সবারই প্রতিদিনই খাবার গ্রহণ করতে হয়। আর খাবার গ্রহণের সময় যদি একজন মুমিন বিশুদ্ধ নিয়তে এবং আল্লাহর নামে খাবার খেয়ে থাকে তা আল্লাহর আনগত্যে এ পরিণত হবে। তাছাড়া যা রাসুল (সা.) যেভাবে খাদ্যগ্রহণ করতেন সেই অনুসারে খাদ্য খেলে তা আল্লাহর আনগেত্যে পরিণত হবে।
রাসুল (সা.) বলেন, মুমিনের সব ধরণের কাজের জন্য তাকে প্রতিদান দেওয়া হয়, এমকি নিজের মুখে খাবারের লোকমা তুলে নেওয়ার সময়ও তাকে নেকি দেওয়া হয়। (মুসনানে আহমাদ, হাদিসঃ ১৫৩১)
নিদ্রা যখন ইবাদতঃ
ঘুম বা নিদ্রা আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাস। আর এই ঘুম রাসুল (সা.) এর সুন্নত মোতাবেক করলেও সেটা আল্লাহর আনগত্যে পরিণত হয়। কেউ যদি ঘুমানোর পূর্বে ওজু করে পবিত্র অবস্থায় এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে ঘুমায় তাহলে তা আল্লাহর উপাসনায় পরিণত হবে। রাসুল (সা.) সবসময় পবিত্র অবস্থায় থাকতেন এবং তিনি ঘুমানোর সময় দুয়া পড়ে ডান পাশ হয়ে ঘুমাতেন এবং রাতের শেষ অংশে তিনি জাগ্রত হয়ে নামাজে দাড়িয়ে যেতেন।
জ্ঞান অর্জন যখন ইবাদতঃ
জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মানুষের জন্য অত্যন্ত জরূরি। তবে মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলে এই নয় যে জাগতিক জ্ঞান অর্জন করা যাবে না। আধুনিক বিশ্বে জাগতিক জ্ঞান অর্জনও অতি প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই জ্ঞান অর্জন হতে হবে নেক নিয়তে তাহলে সেটা ইবাদতে পরিণত হবে। উদাহরণস্বরুপ, যদি মেডিকেল এর কোন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে মুসলিম উম্মাহকে চিকিৎসা দেওয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষা অর্জন বা জ্ঞান অর্জন করে থাকে তখন তা ইবাদতে গণ্য হবে। তাছাড়া যদি কোন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে ইসলাম প্রচারের জন্য জ্ঞান অর্জন করে তাকে তখন তা আল্লাহর আনগত্যে পরিণত হবে।
কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া দুনিয়ার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে থাকে, তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করা তো দূরের কথা, সে ব্যক্তি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। ( আবু দাউদ, হাদিসঃ ৩৬৬৪)
অথাৎ যখন কোন মুসলিম ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুটি উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন করে থাকে তখন তা ইবাদতে পরিণত হয়।