কিয়ামত দিবসে সাত সাক্ষ্য।
1 min readসাত সাক্ষ্য
কিয়ামত দিবসে সাত সাক্ষ্য।
মানুষ দুনিয়াতে প্রতিদিন অনেক কাজকর্ম করে থাকে এবং এইগুলোর প্রতিদান মানুষ পরকালে পাবে। দুনিয়াতে যারা ভালো কাজ করবে তাহলে সে তার উত্তম প্রতিদান পাবে আর কেউ খারাপ কাজ করলে তাকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। কিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে মানুষকে তার প্রতিটি কর্মের হিসাব দিতে হবে। মানুষের ভালো-মন্দের প্রতিফলন দেওয়া হবে সাক্ষ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে। মানুষ দুনিয়াতে প্রতিদিন যে কাজকর্ম করে তার প্রতিটি কাজের সাক্ষ্য রয়েছে। কিয়ামত দিবসে মানুষের বিপক্ষে সাত সাক্ষ্য রয়েছে যারফলে মানুষ ওইদিন তার কৃতকর্মের অস্বীকার করতে পারবে না।
কিয়ামত দিবসে মানুষের বিপক্ষে যে সাত সাক্ষ্য রয়েছে সেসর্ম্পকে আলোচনা করা হলোঃ
১. জায়গা বা স্থানঃ
মানুষ শয়তানের ধোকায় পড়ে নফসের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই অনেক পাপ কাজ করে থাকে। আর এই পাপ কাজ মানুষ যে জায়গা বা যে স্থানে করে থাকে কিয়ামতের মাঠে ওই জায়গা বা স্থান তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে।
মহান আল্লাহ তা’আলা এ সর্ম্পকে কুরআনে বলেছেন, সেদিন পৃথিবী তার যাবতীয় সংবাদ জানিয়ে দেবে। (সুরাঃ জিলজাল, আয়াতঃ ০৪)
২. শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গঃ
মানুষ দুনিয়াতে তার শরীরের যে অঙ্গ দ্বারা পাপ কাজ করবে কিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর সামনে সেইসব অঙ্গ-প্রতঙ্গ মানুষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। মানুষের হাত, পা, চোখ, কান তার বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিবে।
মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আজ আমি তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দিব। ফলে তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিবে। (সুরাঃ ইয়াসীন, আয়াতঃ ৫৫)
৩. জিহবাঃ
জিহবা দ্বারা মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। মানুষ জিহবা দ্বারা প্রতিদিন অনেক কথা-বার্তা বলে থাকেন। সেই কথাগুলো ভালো কিংবা মন্দ হতে পারে। কোন মানুষ যদি তার জিহবা দ্বারা খারাপ কথা বলেন ও অনর্থক কথা-বার্তা বলেন তাহলে তার জিহবা কিয়ামত দিবসে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিবেন।
রাসুল (সা.) বলেছেন, যেকোন ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা ত্যাগ করা। (তিরমিজি, হাদিসঃ ২৩১৭)
৫. দুইজন ফেরেশতাঃ
মানুষের প্রতিদিনের ভালো-মন্দ কাজ লিপিবদ্ধ করার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা দুইজন ফেরেশতা লিপিবদ্ধ করেছেন। এই দুইজন ফেরেশতা মহা বিচারের দিনে আল্লাহর নিকট গুনাহগার বান্দার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, অথচ তোমাদের জন্য কিছু তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতা নিযুক্ত আছে (সম্মানিত লিপিকরণবৃন্দ) তারা জানে তোমরা যা করো। (সুরাঃ ইনফিতার, আয়াতঃ ১১-১২)
৬. আমলনামাঃ
কিয়ামতের মাঠে আল্লাহর নিকট মানুষের আমলনামা ভালো-মন্দের সাক্ষ্য দিবে। যদি কোন ব্যক্তি দুনিয়াতে ভালো কাজ করে তাহলে তার আমলনামা তার পক্ষে আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিবে। আর যদি কোন ব্যক্তি দুনিয়াতে মন্দ কাজ করে তাহলে তার আমলনামা তার বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিবে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর আমলনামা সামনে রেখে দেওয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদের দেখবে তাতে যা লেখা রয়েছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলেছে হায়! আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন কিতাব, ছোট-বড় যত ধরণের সবই হিসাব করে রেখেছে। তারা তাদের সব কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি কোন জুলুম করবেন না। (সুরাঃ কাহফ, আয়াতঃ ৪৯)
৭. মহান আল্লাহ তা’আলা নিজে সাক্ষীঃ
মহান আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসে বান্দার ভালো-মন্দের ব্যাপারে নিজে সাক্ষ্য দিবেন। মহান আল্লাহ তা’আলা হলেন করুণাময়, দয়াময় তবুও তিনি কিয়ামতের দিনে পাপি বান্দার বিপক্ষে সাক্ষী দিবেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে মানুষ! তোমরা যে কাজই করো, তোমরা যখন তাতে লিপ্ত থাকো, তখন আমি তোমাদের দেখতে থাকি। তোমার প্রতিপালকের কাছে অনু পরিমাণ জিনিসও গোপন থাকে না। না পৃথিবীতে, না আকাশে এবং তার চেয়ে ছোট কিংবা বড় এমন কিছুই নেই। (সুরাঃ ইউনূস, আয়াতঃ ৬১)
সুতরাং, উপরে উল্লেখিত সাত সাক্ষ্য কিয়ামত দিবসে মানুষের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।