আদর্শ চরিত্র গঠনে কিছু মানবিক গুনাবলী।
1 min readচরিত্র গঠন
আদর্শ চরিত্র গঠনে কিছু মানবিক গুনাবলী
মানবিক গুণাবলীর মাধ্যমে দেশ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠাতা হয়। আমরা আমাদের চরিত্র গঠনের গুরুত অপরিসীম। একটি সমাজে সুশৃঙ্খলা বিনির্মাণে উত্তম গুনাবলীর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাছাড়া উত্তম চরিত্র আল্লাহ ও তার রাসূলের কাছে অধিক প্রিয়। হাদিস শরীফে উল্লেখিত আছে যে,
জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে যে তোমাদের মধ্যে অধিকতর সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। আর আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ও আমার কাছ থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে বাচাল ও অহংকারী। (তিরমিজি, হাদিস নং: ২১০৮)
আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সা. এর চরিত্র ছিল অত্যন্ত সুন্দর। এই বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে রাসূল সা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন, নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা: কলম, আয়াত: ০৪)
নিচে কয়েকটি মানবিক গুণাবলী সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
সুন্দর ব্যবহারঃ
চরিত্র গঠন এর প্রথম কাজ সুন্দর ব্যবহার। সবার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলা সদকার সমতুল্য। সুন্দর কথা মানুষের অন্তরে অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। সুন্দরভাবে কথা বলার দ্বারা সবার মধ্যে আন্তরিকতা তৈরি হয়। একে-অপরের প্রতি মহানুভবতা সৃষ্টি হয়।
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, সূর্য উদিত হওয়া প্রতিটি দিবসেই মানুষের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গের উপর সদকা দেওয়া আবশ্যক হয়। দুজনের মধ্যে বিবাদ নিরসন করা সদকা, পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা সদকা। মুসলিম হাদিসঃ ১০০৯
সত্যবাদিতাঃ
আদর্শ চরিত্র গঠন এর জন্য সত্যবাদিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তাই বলা হয় সত্যবাদিতা মুমিনের ভূষণ। সততা মানুষকে সফলতার পথ দেখায় আর মিথ্যা ও কপতটা মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। সত্যবাদীকে সবাই পছন্দ করে আর মিথ্যাবাদীকে সবাই ঘৃণা করে। মহান আল্লাহ তাআলা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, হে মুমিনরা তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।
(সূরা: আহজাব, আয়াত: ৭০)
বিপদে ধৈর্য ধারণঃ
মহান আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীল ব্যক্তিকে অধিকতর পছন্দ করেন। বিপদাপদের সময় ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কঠিন সময়ে অস্থির না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে পুণ্যের প্রত্যাশা করা জরুরি। কুরআনে মহান আল্লাহ তা আলা বলেন, যে আল্লাহকে ভয় করল এবং ধৈর্যধারণ করল, আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নিস্ফল করেন না।
আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, যে ধৈর্যধারণের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাদেরকে ধৈর্যধারণের সুযোগ দেবেন। আর ধৈর্যের চেয়ে বেশি ব্যাপক ও কল্যাণকর কোন কিছু কাউকে দেওয়া হয়নি। (বুখারী হাদিস: ১৪৬৯, মুসলিম হাদিস: ১০৫৩)
কল্যাণ কামনাঃ
সবার জন্য কল্যাণ কামনা একটি মহৎ গুণ যা আদর্শ চরিত্র গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। আর সবার জন্য কল্যাণ কামনা করা মুমিনের অন্যতম গুণ। তামিম বিন আউস আদদারি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন দ্বীন হলো মানুষের কল্যাণ কামনা। সাহাবারা জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল কার জন্য? রাসূল সা. বললেন আল্লাহর জন্য ও তার রাসুলের জন্য। মুমিনদের ইমামদের জন্য। সর্বোপরি সাধারণ মুসলিম ও তাদের ইমামদের জন্য।
অর্নথক কাজ হতে বিরত থাকাঃ
ইসলামের সৌন্দর্য হলো অর্নথক কাজ হতে বিরত থাকা বা অর্নথক কাজগুলো পরিহার করা। তাই একজন মুসলিমের অর্নথক কাজে লিপ্ত হওয়া অনুচিত।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন কোন ব্যাক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অর্নথক কাজ পরিহার করা। ( তিরমিজি হাদিস: ২৩১৮)
ক্রোধ হতে বিরত থাকাঃ
ক্রোধ দমন করা ও প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত থাকা মুমিনদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ক্রোধের কারণে সমাজ ও পরিবারের মধ্যে অনেক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এজন্য ইসলাম মুসলিমদেরকে ক্রোধ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। রাগ দমনকারীকে মহান আল্লাহ তাআলা অনেক বেশি পছন্দ করেন। তাছাড়া দমনকারীর মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক উঁচু। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা রবের ক্ষমার দিকে এবং আসমান ও জমিনের সমান বিস্তৃত জান্নাতের দিকে দৌড়ে যাও, যা খোদা ভীরুদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে, ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৩৩)
অপ্রয়োজনীয় কথা হতে চুপ থাকাঃ
চুপ থাকা মুমিনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চুপ থাকা একটি নফল ইবাদত। অহেতুক কথা বলা থেকে চুপ থাকা অধিক উত্তম ও উপকারী।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান এনেছে সে যেন উত্তম কথা বলে না হয় চুপ থাকে। (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)। দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের কথা ভেবে চুপ থাকার বিষয়ে ইসলাম মানুষকে উৎসাহিত করেছেন।
আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করাঃ
ইসলাম মানুষকে আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনের সর্তকতা ও নির্দেশ হচ্ছে, আত্নীয় স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। যদি আত্নীয়তার সুসম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তবে তা মানুষকে কবিরাহ গুনাহের দিকে নিয়ে যায়। এবং ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় জান্নাতের সাথে সুসম্পর্ক। তাই আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা প্রতিটি মুসলিমদের জন্য আবশ্যক।