জুমআর দিনের গুরুত্ব, আমল ও ফজিলত।
1 min readজুমআর দিনের গুরুত্ব, আমল ও ফজিলত।
জুমআর দিনের গুরুত্বঃ
জুমআর দিন মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটিকে সাপ্তাহিক ঈদের দিনও বলা হয়ে থাকে। এবং এই দিনটিকে গরিবের হজ্জের দিন ও বলা হয়ে থাকে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, পৃথিবীর যত দিন সূর্য উদিত হবে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো শুক্রবার। এ দিনে আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এবং কেয়ামত সংঘটিত হবে শুক্রবার দিনে। (মুসলিম শরিফঃ ৮৫৪)
তাছাড়া রাসুল সা. বলেছেন, জুমআর দিন দিবস সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন এবং আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত (ইবনে মাজাহঃ ১০৮৪)
রাসুল সা. বলেছেন, জুমআর দিনকে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন বানিয়েছেন। (সহিহ ইবনে মাজাহ-৯০৮)
হদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে, কোন মুসলিম ব্যক্তি শুক্রবার দিনে অথবা রাতে ইন্তেকাল করলে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের আজাব মাফ করে দিবনে। (তিরমিজিঃ ১০৭৪)
জুমআর দিনের সম্মানে এই দিনটিতে জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্জলিত বা উত্তপ্ত করা হয় না।
তাফসিরে এসেছে- আল্লাহ তাআলা প্রতি জুমআর দিন জান্নাতিদের সাক্ষাতের জন্য প্রকাশ্যে আসেন।
জুমআর দিনের গুরুত্ব এত বেশি যে এই দিনে সকল কবরবাসীর আযাব মাফ করে দেওয়া হয়।
আমল ও ফজিলতঃ
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরুপে ওযু করে পায়ে হেটে জুমআ নামাজে আসে এবং চুপ থাকে তারপর মনোযোগ সহকারে জুমআ খুৎবা শোনে। তারপরে নামাজ শেষ করে তখন থেকে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত ও অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ মুসলিমঃ ১৮৬১)
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বর্ণনা করেছেন, রাসুল সা. বলেন, জুমআর দিনে এমন একটি মুহূর্ত রযেছে যদি কোন মুসলিম এ সময়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান আল্লাহ তাআলা তাকে দান করেন। মুহূর্তটি তোমরা আসরের নামাজের শেষে অনুসন্ধান করো। (আবু দাউদঃ ১০৪৮)
সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমআর দিনের সদকা করা ঐ রকম উত্তম, যেমন সারা বছর সদকা করার চেয়ে রমজান মাসে সদকা করা উত্তম। হযরত কাব ইবনে মালিক রা. বর্ণনা করেন, জুমআর দিন সদকা করা অন্য সকল দিনের তুলনায় অধিক সওয়াব ও গুরুত্বপূর্ণ। (মুসলিম)
রাসুল সা. বলেছেন, জুমআর দিন মসজিদের দরজায় ফেরেস্তারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে ব্যক্তি সবার আগে আসে ওই ব্যক্তি একটি মোটাতাজা উট কুরবানি দেওয়ার সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। এরপর যে ব্যক্তি আসে তারপর একটি গাভী কুরবানের সওয়াব পাবে। এইরকম ক্রমানুনারে তাদের প্রত্যেকের আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে। তারপর ইমাম যখন খুৎবা শুরু করেন তখন ফেরেস্তাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগসহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারী হাদিসঃ ৯২৯)
জুমআর অন্যতম আমল হলো সুরা কাহাফ পাঠ করা। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে তা দুই জুআর মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি ওযুর পর এই সুরাটি পড়বে তার নামে তার একটি সিল দেওয়া হব,যা কেয়ামত পর্যন্ত আর থাকবে। (তারগিবঃ ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক ২/৩৯৯)
জুমআর দিন রাসুল সা. এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা অনেক বেশি ফজিলত রয়েছে। হযরত আউসবিন আবি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমআর দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম আ.-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙ্গায় ফুক দেওয়া হবে এবং এই দিনেই সবাইকে বেহুশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমান দরুদ পাঠ করো। কারণ জুমআর দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে? অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। উত্তরে রাসুল সা. বললেন, আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন। (আবু দাউদ ১০৪৭)
তাই আসুন, আমরা জুমআর দিনের গুরুত্ব সর্ম্পকে অবগত হই এবং সাধ্যমত আমল করার চেষ্টা করি।