Islamic Zone

islamic zone

দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালা।

1 min read
দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী

দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী

দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালা।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালা মেনে চলার গুরুত্ব অনেক বেশি। ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা এটি মুমিনের একটি অন্যতম গুণ। ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রিয় হওয়া যায়।ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালার শিক্ষা দিয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি ক্ষমার নীতি গ্রহণ করো, লোকদের সৎকাজের আদেশ দাও এবং মূর্খদের এড়িয়ে চলো। (সুরাঃ আরাফ, আয়াতঃ ১৯৯)

দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালা সর্ম্পকে আলোচনা করা হলোঃ

১. সবার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করাঃ

সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার করা এটি একটি মহৎগুণ। সুন্দর ব্যবহার দ্বারা মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। ধনী-গরীব, জাতি, বর্ণ-ধর্ম সবার সাথে সুন্দরভাবে কথা বলা, ভালো ব্যবহার করা ভদ্রতার পরিচায়ক। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, আর আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের প্রতি (উম্মতের প্রতি) কোমল হয়েছেন। যদি আপনি কর্কশভাষী ও কঠোর হতেন তাহলে তারা আপনার নিকট হতে সরে যেত। (সুরাঃ আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫৯)

২. সর্বাবস্থায় সুশৃঙ্খল বা পরিপাটি থাকাঃ

ইসলাম মানুষকে সর্বাবস্থায় সুশৃঙ্খল বা পরিপাটি থাকতে শেখায়। পরিপাটি থাকা ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসুলের কাছে অধিক প্রিয়। তাছাড়া সুশৃঙ্খল বা পরিপাটির মাধ্যমে একজন ব্যক্তির সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।

এক হাদিসে এসেছে, আতা বিন ইয়াসীর থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মসজিদে অবস্থানকালে এক লোক মাথা ও দাড়ির কেশ অবিন্যস্ত অবস্থায় সেখানে প্রবেশ করে। তখন রাসুল (সা.) তার হাত দ্বারা ওই ব্যক্তির দিকে ইশারা করলেন যেন সে তার মাথা ও দাড়ির কেশ বিন্যাস করে। তারপরে সে ব্যক্তি তা করে ফিরে আসলো। রাসুল (সা.) বলেন, শয়তানের মতো তোমাদের কোন ব্যক্তির এলোকেশে আসার চেয়ে এটা কি উত্তম নয়? (মুয়ত্তা মালেক: সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিসঃ ৪৯৩)

৩. পবিত্র থাকাঃ

পবিত্র থাকা ঈমানের একটি বড় অংশ। পবিত্রতা মুমিনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পবিত্রতা অর্জনকারীকে মহান আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। এ সর্ম্পকে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন। (সুরাঃ বাকারাহ, আয়াতঃ ২২২)

৪. মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা ও রাগান্বিত না হওয়াঃ

আমাদের প্রত্যেকের উচিত সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলা। কেননা আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। তাছাড়া এটি মুমিনের একটি মহৎ গুণ। একজন হাস্যোজ্জল মানুষের সাথে সবাই কথা বলতে পছন্দবোধ করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, জৈনিক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বলেন, তুমি রাগ করো না। লোকটি কয়েকবার একই কথা বললে রাসুল (সা.) প্রত্যেকবারই বলেন, রাগ করো না। (বুখারী হাদিসঃ ৬১১৬)

৫. প্রতিবেশীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করাঃ

প্রতিবেশীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা একজন মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে নিজের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে প্রতিবেশিদের সাথে সুসর্ম্পক বজায় রাখা অপরিহার্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, জিবরাঈল (আ.) প্রতিবেশীদের সাথে ভালো ব্যবহার করার জন্য আমাকে এত বেশি উপদেশ দিতে থাকেন যে, আমি ভেবেছিলাম যে হয়ত প্রতিবেশীদেরকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করে দেবেন। (বুখারী, হাদিসঃ ৬০১৪)

৬. প্রতিদিনের কর্মকান্ডে শৃঙ্খলাঃ

মানুষ তার জীবনকালে প্রতিদিন অনেক কাজ কর্মে লিপ্ত থাকে। আর এই প্রতিদিনের কর্মকান্ডের শৃঙ্খলার প্রমাণ পাওয়া যায় আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) এর জীবনীতে।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যখন রাসুল (সা.) হাচি দিতেন, তিনি তার মুখমন্ডলের হাত বা কাপড় দ্বারা আবৃত করতেন এবং তা দ্বারা তার স্বর বন্ধ করতেন। (আবু দাউদ হাদিসঃ ৫০২৯)

উচ্চস্বরে হাসা, কথা বলা, চিৎকার করা কোন নম্র-ভদ্র মানুষের কাজ নয়।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসুল (সা.) কে কখনো অট্টহাসি করতে দেখিনি, যাতে তার জিহবার তালু দেখা যায়। তিনি মৃদু হাসতেন। (বুখারী, হাদিসঃ ৪৮২৮)

৭. লজ্জাশীলতাঃ

লজ্জাশীলতা সভ্যতা ও মার্জিত রুচির পরিচায়ক। রাসুল (সা.) ছিলেন লাজুকতার মূর্ত প্রতীক।

রাসুল (সা.) বলেন, লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অঙ্গ। (বুখারী, হাদিসঃ ২৪)

৮. অপরকে ক্ষতির থেকে রক্ষা করাঃ

কোন ব্যক্তির মধ্যে মন্দাচার কোন কিছু দেখলে তাকে ব্যক্তিগতভাবে হিকমতের সাথে বুঝাতে হবে যাতে করে সেই ব্যক্তিটি নিজেকে সংশোধন করে। আর যতটুকু সম্ভব অপরকে ক্ষতির থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা।

প্রিয় রাসুল (সা.) বলেন, একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরুপ। একজন মুমিন অপর মুমিনের ভাই। তারা একে অন্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে রক্ষা করে। (আবু দাউদঃ ৪৯১৮)

৯. অন্যের প্রতি কুধারণা ত্যাগ করাঃ

ইসলামের শিক্ষা হলো অন্যের প্রতি সবসময় সুধারণা পোষণ করা এবং কুধারণাকে ত্যাগ করা। এ সর্ম্পকে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদাররা! তোমরা বেশি ধারণা করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা কোন কোন ধারণা পাপ। (সুরাঃ হুজরাত, আয়াতঃ ১২)

১০.একে-অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করাঃ

ইসলামের শিক্ষা হলো একজন ভাই অপর ভাইকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। আর ইসলামে একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই হয়।

রাসুল (সা) বলেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে নিয়োজিত থাকেন, মহান আল্লাহ তাআলা তার প্রয়োজন পূরণে ব্যস্ত থাকেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভাইয়ের একটি সমস্যা দূর করবে, মহান আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি সমস্যা দূর করে দেবেন। (বুখারী হাদিসঃ ২৪৪২)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright ©2024 All rights reserved | www.islamiczone.org | Develop by www.kictbd.com | Newsphere by AF themes.