আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনির সকল শিক্ষার্থীদের আবসন ও সকল ফি মওকুফ করা হয়েছে।
1 min readফিলিস্তিনি চলমান অবস্থা বিবেচনা করে ফিলিস্তিনির সকল শিক্ষার্থীদের আবসন ও সকল ফি মওকুফ ঘোষণা করেন আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমদ আল-তাইয়িব।
ইসলামী জ্ঞানার্জনে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। মিশরের কায়রো শহরে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়টি মিশর সরকারের পৃষ্ঠ-পোষকতায় পরিচালিত হয়। যেখানে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় ও পূণ্যজ্ঞান লাভের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা মিশরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্তি হন।
ফিলিস্তিনির অনেক শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত আছে। ইসরাইল ফিলিস্তিনি যুদ্ধের কারনে ফিলিস্তিনির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এই দিক বিবেচনা করে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমদ আল-তাইয়িব নির্দেশ দিয়েছেন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও আবাসন বাবদ সকল ফি মওকুফ করার। তিনি গতকাল এক বিবৃতিতে সব ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনিদের জন্য সব সময় আল-আজহারের সব কিছু উন্মুক্ত রয়েছে বলে জানান তিনি। ফি মওকুফ এর মাধ্যমে বিধস্ত হৃদয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আবাসন ও ফি মওকুফ এর মাধ্যমে এই সকল শিক্ষার্থীদের পূনঃরায় শিক্ষার্জনের প্রতি আগ্রহী ও নিজের সুশিক্ষায় গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
ফিলিস্তিনি বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করে আল-আজহার কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম ইমাম ড. আহমদ আল-তাইয়িব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সব ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে মাসিক বৃত্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ফিলিস্তিনি চলমান ইসরাইলি দক্ষলদার বাহিনীর নৃশংস আগ্রাসনের এই সময়ে সব ফিলিস্তিনির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবে সবার খোঁজ খবর নিচ্ছে। তা ছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের কে আহ্বান করেছেন সর্বাত্মক চেষ্টা করে জ্ঞানার্জনের করতে হবে, যেন এই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে মিসর ও ফিলিস্তিনে আল-আজহারের উত্তম প্রতিনিধি ও আলেম হিসিবে কাজ করতে সক্ষম হয়।
বিদ্যার্জনের সাথে সাথে ফিলিস্তিনির সুনাগরিক ও খাটি মুসলিম হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান প্রদানে ও লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। এবং সেই সাথে ঘোষণা কারেন ফিলিস্তিনির সকল শিক্ষার্থীদের আবসন ও সকল ফি মওকুফ ঘোষণা করেন আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমদ আল-তাইয়িব।
এ দিকে ৩ ডিসেম্বর আমিরাতে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ শুরু হয়েছে। জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ প্রথমবারের মতো ফেইথ প্যাভিলিয়ন চালু হয়েছে। এতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম শায়খ ড. আহমদ আল-তাইয়িবও পোপ ফ্রান্সিস।
আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম শায়খ ড. আহমদ আল-তাইয়িব নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নৃশংস যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে চলমান নৃসংশ হত্যাযজ্ঞ প্রতিরোধে সব ধর্মের প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
চলমান ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলের যুদ্ধে ১৫ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু ও নারী রয়েছে। ইসরাইলি বন্দী মুক্তির ও কাতারের আহ্বানে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এরপর সাত দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে গত এক দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়। যুদ্ধবিরতিকালে হামাস ৮০ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয় এবং ইসরায়েল ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেয়।
আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর তৃতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। ৯৭১ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৩৬১ হিজরির ৭ রমজান শুক্রবার তৎকালীন ফাতেমি খলিফা আল-মুইজ লি-দিনিল্লাহর নির্দেশে সেনাপতি জওহর সিকিল্লি ফাতেমির তত্ত্বাবধানে জামিউল আজহার বা আল-আজাহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
শুরুর দিকে তা ইসমাইলি শিয়াদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ৫৮৯ হিজরিতে সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবির মিসর বিজয়ের পর থেকে অদ্যাবধি তা সুন্নি ধারার ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এখানে ১২০টি দেশের ৫০ হাজার শিক্ষার্থীসহ প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এর মধ্যে ৪৪৪ জন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী রয়েছে।