বন্ধু তৈরি ক্ষেত্রে যে বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিৎ। How to keep in mind when making friends.
1 min readবন্ধু তৈরি ক্ষেত্রে যে বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিৎ।
আমাদের সবারই কম বেশি বন্ধু আছে। তবে কে আপনার প্রকৃত বন্ধু? তা খুজে বের করা জন্য নবী করিম (স.) কিছু দিক নিদেশনা বা হাদিস রয়েছে।
হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর এক সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, ‘তুমি তোমার কোনো (মুসলমান) ভাইকে মহব্বত করলে তার সঙ্গে ঝগড়া করবে না, তার ক্ষতি সাধনের চিন্তাও করবে না এবং তার কাছে কিছু চাইবেও না। এমন যেন না হয় যে তুমি শত্রুর খপ্পরে পড়ে যাও এবং সে তোমাকে তার সম্পর্কে এমন কথা বলবে যা তার মধ্যে নেই। এভাবে সে তোমার ও তার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করবে।
(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ৫৪৭)
বন্ধু নিবার্চন করা সময় বেশ কিছু বিষয় আমাদের দৃষ্টিপাত দিতে হবে। কারণ রক্তের সম্পর্ক ছাড়া আত্নার সম্পর্ক এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক। অনেক সময় আমরা যাকে তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে ফেলি। যা আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।
মানুষের মুখে মুখে একটি উক্ত “সংগ দোষে লোহ ভাসে“। এর অর্থ যেমন বন্ধু হবে তার কিছু আচরণ আমাদের আচরণে প্রভাব বিস্তার করে।
“বন্ধু কী? দুটি দেহের মধ্যে অভিন্ন একটি হৃদয়। – এরিস্টটল”
বন্ধু নির্বাচন ক্ষেত্রে হাদিসে মুয়াজ (রা.) বন্ধুত্ব ও সম্ভাব রক্ষার উপায় বর্ণনা করেছেন। তিনি এমন কিছু নীতির কথা বলেছেন যা অনুসরণ করলে বন্ধুত্ব স্থায়ী হয় এবং সম্পর্ক সুন্দর থাকে। তা হলো:
১. আস্থা বা বিশ্বাস রাখা:
বন্ধুত্বের অন্যতম প্রধান দাবি হলো বন্ধুকে বিশ্বাস করা এবং তার ওপর আস্থা রাখা। কেউ কোনো কিছু বললেই প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস না করা। মহান আল্লাহ বলেন, “যখন তারা এটা শুনল, তখন মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীরা আপন লোকদের সম্পর্কে কেন ভালো ধারণা করল না এবং বলল না, এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ।’ (সুরা: নুর, আয়াত : ১২)”
২. বিপদ বা ক্ষতি না করা:
এক বন্ধু অপর বন্ধুর ক্ষতি করবে না। এক মুমিন অপর মুমিনের ক্ষতি করবে না। মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতিসাধন করে অথবা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৯৪১)
৩. বন্ধু থেকে অধিক আশা না করা :
এখানে সাধারণ প্রয়োজন পূরণে সহযোগিতা চাওয়া উদ্দেশ্য ত নয়, বরং উদ্দেশ্য হলো বন্ধুরা পরস্পরের কাছে স্বার্থের সন্ধান করবে না। তাদের সম্পর্ক থাকবে স্বার্থ চিন্তার ঊর্ধ্বে। কেননা মহানবী (সা.) বলেন, সর্বোত্তম মানুষ সেই যে মানুষের জন্য বেশি উপকারী। (মিজানুল ইতিদাল : ৩/২৪৮)
৪. সম্পর্ক ছিন্ন না করা:
গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া বন্ধু অপর বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ হলো- তোমার সঙ্গে যে আত্মীয়তা ছিন্ন করেছে, তুমি তার সঙ্গে তা বজায় রাখো, তোমাকে যে বঞ্চিত করেছে, তুমি তাকে প্রদান করো এবং যে তোমার প্রতি অন্যায় আচরণ করেছে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৮০৭৯)
৫. বিবাধে না জড়ানো:
ইসলাম সাধারণভাবেই ঝগড়া করতে নিষেধ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার পরে হিদায়াতপ্রাপ্ত লোক তখনই পথভ্রষ্ট হবে, যখন তারা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): ‘বরং এরা তো এক বিতর্ককারী সম্প্রদায়।’ (সুরা: জুখরুফ, আয়াত: ৫৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪৮)
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি আমার উম্মাতের কাউকে যদি আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তবে আবূ বকর (রা.) গ্রহণ করতাম। তবে তিনি আমার ভাই ও আমার সাহাবী। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৬৫৬)
আরো একটি প্রসিদ্ধ হাদিস আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যু-রোগে আক্রান্ত হন, তখন তিনি বলেছিলেন, فِي الرَّفِيْقِ الْأَعْلَى অর্থাৎ উচ্চে সমাসীন বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই)। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৪৩৬)
বন্ধুত্ব শুধু ইহকালের জন্য নয় বন্ধুত্ব করা প্রয়োজন ইহকাল এবং পরোকাল উভয় কাল (সময়) এর জন্য। পরোকালে জান্নাত লাভের সহায়তা করবে বন্ধুত্ব আবার জাহান্নামে যাবার কারন ও হতে পারে বন্ধুত্ব ।
বন্ধুত্ব আত্নার বাঁধন, জীবনে চলার পথে আমরা বন্ধুত্ব বন্ধনে আদ্ধ হয়। তবে এই বন্ধন থেকে শত্রু তৈরি হয়েছে এমন ঘটনাও নিহাতি কম নয়। এই বিষয়ে সর্তক থাকা অনেক জরুরি । আল্লাহ সবাইকে সৎ বন্ধু লাভের তাওফিক দিন। আমিন।
বন্ধুত্ব আত্নার বাঁধন