হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.) এর জীবনী।
1 min readহযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.) এর জীবনী।
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন ধমীয় মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের প্রহরী। রাসুল (সা.) এর ইন্তেকালের পর থেকে যখন পুনরায় সমস্ত পৃথিবীতে বিদআদ, শিরক ও কুফরীতে ভরে যায় তখন হযরত ওমর (রা.) এর বংশধর হযরত শায়খ আব্দুল আহাদ (রহ.) এর ঘরে জন্ম হয় হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.)। এবং তার দ্বারা দ্বীন ও ইসলাম পুনরায় সকল ধরণের বিদআত, শিরক ও কুফরী থেকে মুক্ত হয়।
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.) এর জন্ম ও বংশঃ
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.) এর জন্ম ৯৭১ হিজরী মোতাবেক ১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দে। ভারতের পাঞ্জাবের তৎকালীন পাতিয়ালি রাজ্যের বিখ্যাত শহর সিরহিন্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল আহাদ। হযরত এর পিতা ছিলেন হযরত ওমর (রা.) এর বংশধরদের মধ্যে একজন।
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.)-এর শৈশবকালঃ
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.) শিশু থাকা অবস্থায় একবার তিনি ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার কারণে তার পরিবারের সবাই তার জীবন সর্ম্পকে হতাশ হয়ে পড়েন। ফলে তার পিতা অসুস্থ শিশুটিকে নিয়ে হযরত শাহ কামাল কায়থিলী (রহ.) এর সিরহিন্দ শরীফে আসেন। শিশুটিকে দেখা মাত্রই হযরত শাহ কামাল কায়থিলী (রহ.) তার জন্য দুয়া করেন এবং তিনি বলেন এই শিশুটি এক সময় হক্কানী ও আরিফে কামেল হবে। তার কাছে হাজার হাজার লোক আত্মিক তালিমে উপকৃত হবেন। এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীন ও ইসলাম সারা দুনিয়াতে ছড়াবে। এরপর তিনি শিশুটিকে কোলে নিয়ে তার পবিত্র জিহবা শিশুটির মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দেন। অতপর শিশুটি অনেকক্ষণ পর্যন্ত লেহন করতে থাকেন। তারপর শাহ সাহেব শিশুটির পিতাকে সান্তনা দিয়ে বলেন ইনশাআল্লাহ শিশুটি দ্রুতই আরোগ্য লাভ করবে। তাছাড়া হযরত এর শৈশবকালে আশ্চর্যজনকভাবে কখনো নগ্নদেহে থাকতেন না। তিনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতেন। তিনি হাসিমুখে থাকতেন এবং তার আচার আচরণ ছিল খুবই নমনীয়। শৈশব থেকে তিনি সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার করতেন এবং বড়দেরকে সম্মান করতেন।
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.)-এর শিক্ষা অর্জনঃ
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.) প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার পিতার নিকট হতে। তিনি কয়েক বছরের মধ্যেই পবিত্র কুরআনুল কারীমের হেফজ সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি চলে যান বিখ্যাত আলেম কামাল কাশ্মীরীর কাছে। সেখানে তিনি ধর্ম শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আরবি সাহিত্যও ভালোভাবে অধ্যায়ন করেন। অতঃপর সেখান থেকে শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি দেশে চলে আসেন এবং অধ্যয়ন ও অধ্যাপনায় মনোনিবেশ করেন। কিন্তু জ্ঞানার্জনের প্রতি অধিক আগ্রহ থাকায় তিনি চলে যান রাহতাস ও জৌনপুরে। সেখানে তিনি আবুল ফজল ও আবুল ফায়েজের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখার সুযোগ পান।
দীনে ইলাহির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও কর্মপ্রন্থাঃ
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.) এর জন্মের সময় বাদশা আকবর দ্বীনে ইলাহির নামে এক মনগড়া ধর্ম প্রবতর্নের চেষ্টা করেছিল। তার শিক্ষা গ্রহণের সময় খুব কাছ থেকে বাদশা আকবর ও তার ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ দেখেছিলেন। যখন তিনি কর্মজীবনে আসেন তখন তিনি ষ্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন যে কিভাবে দ্বীন ইসলামের বিরোধীতায় অবতীর্ণ হয়েছে। তখন তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা ঈমানী শক্তি জ্বলে উঠে। তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হয়ে ওঠে এই অবস্থার পরিবর্তন করা। তার অন্তরের মূল জায়গা দখল করে নেয় হিন্দুস্তানে মুসলিম উম্মাহর চিন্তা-চেতনা। এরপর তিনি তার কর্মপ্রন্থা পরিবর্তন করেন।
প্রথমে তিনি নিজের ভিতর থেকে সকল জাগতিক স্বার্থকে বের করলেন। তারপর তিনি সংশোধন ও ইসলাহের নিয়তে রাজ্যের কর্মকর্তাদের কাছে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিলেন। অতঃপর তিনি রাজ্যের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের কাছে যাওয়া-আসা শুরু করলেন। শুরুতে তাকে সবাই ধান্দাবাজ মনে করত কিন্তু পরবর্তীতে সবাই বুঝতে পারল যে তিনি শুধু একজন রক্ত, মাংশে গড়া মানুষ নয়, বরং তার ভিতরে রয়েছে মনুষ্যত্বের যাবতীয় গুনাবলী। তার উপর বস্তুর কোন কর্তৃত্ব চলে না, উল্ট তিনি বস্তুর উপর কর্তৃত্ব করেন। তারপর সবাই হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.) এর নিকট নিজেদেরকে সোপর্দ করে দিল। এ সময় বাদশা আকবর জীবিত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বাদশা আকবর মৃত্যুবরণ করলে ক্ষমতায় বসেন সম্রাট জাহাঙ্গীর।
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.)-এর মৃত্যুকালঃ
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.) একটা সময় তার সকল দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে তার জন্ম স্থান সিরহিন্দে ১৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।