Islamic Zone

islamic zone

হযরত ওমর (রা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী।

1 min read
হযরত ওমর (রা.)

হযরত ওমর (রা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী।

সূচনা:

হযরত ওমর (রা.) ৫৮২ ঈশায়ী সনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ‘আফা’ নামক স্থানে হযরত ওমর (রা.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল খাত্তাব এবং দাদার নাম নুফাইল ইবনে উজ্জা। তিনি কুরাইশ বংশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। হযরত ওমর (রা.) পিতা খাত্তাব এক সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) পিতা খাত্তাব ঐ সময়ের একজন প্রসিদ্ধ কবি ছিলেন। তার রচিত বেশ কয়েকটি কবিতার সন্ধান পাওয়াও গেছে। খাত্তাব  কুরাইশ সেনাপতি হিসাম নামক এক ব্যক্তির কন্যা হানতামাকে বিবাহ করেন। হানতামা ছিলেন হযরত ওমর (রা.)  মাতা।

তাঁর সপ্তম পুরুষ ছিলেন আদ্ এবং তাদের আপন ভাই মোররাহ। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পূর্ব পুরুষ ছিলেন। হযরত ওমর (রা.) ও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একই বংশোদ্ভূত। আর এই বংশটি ছিল আরবের বিখ্যাত বংশ। ওমর (রাঃ)-এর বাসস্থান ছিল মক্কায় জাবালে তাকিরের নিকটই। ইসলামী আমলে তাঁর নামানুসারে সেই পাহাড়টির নামকরণ করা হয় জাবালে ওমর বা ওমর (রাঃ) পাহাড়।

হযরত ওমর (রা.) এর বাল্যকাল :

হযরত ওমর (রা.) পিতা খাত্তাব অবস্থাশালী ব্যক্তি ছিলেন। তার অনেক উট ছিলো। ওমর একটু বড় হলেই উটগুলো চরাবার ভার তার ওপরে পড়ল। উট নিয়ে তিনি চলে যেতেন দূরে মাঠে, বহু দূরে জাজনান নামক প্রান্তরে। মাথার ওপরে আগুন ঢালা রোদ, সে রোদে কিশোর ওমরকে উটগুলোর তদারকী করতে হতো। এভাবেই কিশোর বয়স থেকে তিনি কষ্ট সহ্য করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন। হযরত ওমর (রা.) পিতা জ্ঞানী ব্যক্তি হওয়ায় ছেলে কে লেখা পড়া প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন। আর তাই সারাদিন মাঠে মাঠে উট চরাবার পর রাত্রে তাকে বই নিয়ে পড়তে বসতে হতো। অধিক রাত পর্যন্ত তাঁকে পড়া লেখা করতে হত। ধীরে ধীরে তিনি বড় হয়ে উঠতে লাগলেন।

সেই সময় ঘরে ঘরে সন্তানদের রণ শিক্ষা দেওয়ার প্রচলন ছিল। আর তার প্রেক্ষিতে তীর আর বর্শা নিক্ষেপে হযরত ওমর (রা.) বিশেষ পারদর্শী হয়ে উঠলেন। কুস্তিগীর হিসাবেও হযরত ওমর (রা.)  জনসম্মুখে বিশেষভাবে পরিচিত হলেন। পিতার অনুপ্রেরণায়  হযরত ওমর (রা.) কবিতা লেখা ও আবৃত্তি করতেন শিক্ষিতি হওয়া বক্তৃতা ও পারদর্শী ছিলেন। এ সময়ে সমগ্র কুরাইশ বংশে কেবল সতেরো জন মাত্র লেখাপড়া জানতো।

ওমর ছিলেন সেই সতেরো জনের মধ্যে একজন। ওমর যুবক হয়ে উঠলেন। এবার তাকে উপার্জনে মন দিতে হল। তার পিতার আমল হতে যে ব্যবসায় ছিল সেটাই তিনি অবলম্বন করলেন। এই বাণিজ্য উপলক্ষ্যে ইরাক, সিরিয়া (শাম) প্রভৃতি দেশে তাকে যেতে হত। নানা দেশ ভ্রমণ করে তিনি অল্প দিনের মধ্যেই আরব দেশের জনসমাজে পরিচিত হয়ে উঠলেন।

হযরত ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ :

হযরত ওমর (রা.) বয়স যখন ২৫ বছর তখন মক্কা নগরীতে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) গোপনে  ইসলাম প্রচার করছে। এ কথা জানাজানি হলে কুরাইশগণ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর খুব ক্ষিপ্ত ছিল। তার হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর হত্যার ঘোষণা দিল এবং পুরস্কারেও ঘোষণা দিল। তখন কুরাইশগণের কুমন্ত্রণায় হযরত ওমার (রা.) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর হত্যার দায়িত্ব নিয়ে নেই। ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে একখানা খোলা তরবারী হাতে নিয়ে তিনি ছুটলেন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর গৃহের দিকে।

তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কয়েকজন সাহাবীকে নিয়ে সাফা পর্বতের নিকট আরকাম নামক এক নব মুসলমানের বাড়িতে গিয়ে ধর্মীয় আলোচনা করছিলেন। সেখানে হযরত আবু বকর (রাঃ) প্রমুখ হযরত আমীর হামযা (রাঃ) এবং হযরত আলী (রাঃ) সাহাবীগণ হাজির ছিলেন।

হঠাৎ কেউ একজন বলল, মনে হয় ওমর আসছে। তা শুনে মহাবীর আমীর হামজা (রাঃ) রাগান্বিত স্বরে বললেন-তাতে কি হয়েছে? আসতে দাও যদি সে সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আসে তবে আমরা তাকে বরণ করে নেব। আর যদি সে কোন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আসে তবে তার তরবারীর দিয়েই তার মস্তক দ্বিখণ্ডিত করে ফেলবো। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রশান্ত স্বরে সকলকে শান্ত হবার জন্য বললেন-তোমরা ওমরকে কেউ কোন কিছু বলবে না। তাকে ঘরের মধ্যে আসতে দাও। তাকে যা কিছু বলার দরকার তা আমি নিজেই বলব।

ইতিমধ্যে হযরত ওমর (রাঃ) গৃহাভ্যন্তরে আসলেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে নিজের কাছে আসার আহ্বান করলেন। ওমর ধীরে ধীরে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট আসলেন।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার পিঠে হাত দিয়ে বলল-ওমর! এভাবে আর কতদিন অন্ধকারের মধ্যে হামাগুড়ি দিবে? সত্যের বিরুদ্ধে আর কত লড়াই করতে চাও? আল্লাহর নবীর পবিত্র স্পর্শে হযরত ওমর (রাঃ)- এর বক্ষ দুরু দুরু করে কাঁপতে লাগল।

তিনি অবনত মস্তকে উত্তর করলেন-ইয়া রাসুল (সাঃ) সত্যের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হয়ে গিয়েছে। এবার আত্মসমর্পনের জন্য হাজির হয়েছ। এই বলে হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর হাতের তরবারী খানা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পায়ের নিকট রেখে দিলেন।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শান্ত গলায় বললেন-ওমর! এতদিনে তোমার ভুল ভেঙ্গেছে। এসো তবে এবার তোমাকে ধর্মভুক্ত করে খাটি ও সত্য লাভ করার উপায় বের করে দেই।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ওমরকে কলেমায়ে তাইয়্যেবাহ পাঠ করিয়ে ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত করলেন। তারপর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আনন্দে উচ্চ এক ধ্বনি করলেন-‘আল্লাহ আকবার’ সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন-‘আল্লাহ আকবার’।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ) সম্পর্ক :

হযরত ওমর (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার সহিত হযরত ওমর (রাঃ)-এর যে গভীর অন্তরঙ্গতা পয়দা হয়েছিল তার কল্পনাও করা যায় না। এককালে কোন একটি সামাজিক কারণে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পূর্ণ একমাস ধরে তার স্ত্রীদের থেকে পৃথক অবস্থান করছিলেন। তা প্রকাশ পাওয়ায় সকল সাহাবী অত্যন্ত চিন্তিত ও দুঃখ পেল। তারা বলাবলি করতে লাগলেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্ভবতঃ তার সব স্ত্রীদের তালাক প্রদান করেছেন। কিন্তু ঘটনাটি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হওয়ার জন্য তারা অস্থির হয়ে উঠলেন।

একদিন তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বাড়ির দ্বারে গিয়ে হাজির হলেন এবং সাক্ষাত প্রার্থনা করলেন। কিন্তু বার বার উচ্চস্বরে আওয়াজ করা সত্ত্বেও ভিতর হতে কোন সাড়া শব্দ পেলেন না।

তখন তিনি আবার উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন-ইয়া রাসুল (সাঃ) আপনি হয়তো ধারণা করেছেন যে, আমি আমার দুহিতা হাফসার জন্য আপনার কাছে কোন রূপ অনুরোধ করতে এসেছি। কিন্তু আসলে মোটেই তা নয়। আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি আপনার নির্দেশ পেলে আমি স্বহস্তে আমার কন্যাকে হত্যা করে ফেলতে পারি।

হযরত ওমর (রাঃ)-এর এই প্রকারের কথা শুনে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আর থাকতে পারলেন না। তিনি ওমরকে গৃহের মধ্যে আসতে বললেন।হযরত ওমর (রাঃ) তাকে সবিনয়ে জিজ্ঞেস করল-ইয়া মুহাম্মদ (সাঃ)! আপনি কি আপনার বিবিগণের সহিত সম্পর্ক চ্ছেদ করেছেন?

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মৃদু হেসে বললেন, কখনই তা নয়। এবং তুমি সাহাবিদের জানিয়ে দাও আমি আমার কোন স্ত্রী কে তালাক প্রদান করি নাই।

এই ঘটনাটি দিয়ে পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করা যায় যে, হযরত ওমর (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সহিত কত বেশি অন্তরঙ্গ ছিলেন।

হযরত ওমর ফারুক উপাধির ঘটনা:

হযরত ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহনের পূর্বে ইসলামের দাওয়াত ও প্রচার ছিল সম্পূর্ণ গোপন। তার ইসলাম গ্রহণের পর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুমতি ক্রমে প্রকাশ্যে ইসলামের সকল বিষয় প্রচার শুরু হয়।

হযরত ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর প্রকাশ্যে কাবার সামনে নামাজ আদায় করাতে মুসলিমরা শুরু করে। ইসলাম গ্রহণের পর গোপনীয়তা পরিহার করে প্রকাশ্যে দিনের আলোতে মুসলিমদের নিয়ে বাইরে আসেন এবং কাবা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। তিনি ছাড়াও হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন। সেদিন মুহাম্মদ (সাঃ) আর এই সাহসিকতা দেখে তাকে “ফারুক” উপাধি দেন। ফারুক অর্থ সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী।

হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) খলিফা সময় এর জীবনযাপন :

হযরত আবু বকর (রা.) প্রথম খলিফা ছিলেন তার মৃত্যুর পরে হযরত ওমর (রা.) কে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। উনার খিলাফতকাল ছিলো সর্বমোট ১০ বছর ৬ মাস স্থায়ী হয়। খলিফার জীবনযাত্রা ছিলো অতি সাধারণ। খলিফা হবার আগে তিনি সওদাগরী করতেন। হযরত ওমর (রাঃ) খলিফা হওয়ার পরে তিনি বায়তুল মাল হতে খুব সামান্য পরিমাণ ভাতা গ্রহণ করতেন, এতে খুব সাধারণ ভাবেই তার জীবনযাত্রা নির্বাহ হত। কিন্তু সাহাবাগণ স্থির করলেন কিছু অধিক পরিমাণে অর্থ খলিফা যদি গ্রহণ করতে সম্মত হন, তবে তার সংসারে সচ্ছলতা আসতে পারে।

কিন্তু খলিফার কাছে এই প্রস্তাব নিয়ে যেতে কেউ সাহস পেলেন না। তারা স্থির করলেন, হযরত হাবসা খলিফা ওমর (রাঃ)-এর অতি আদরিণী কন্যা। তার কাছে কথাটা বললে হয়তো বা কাজ হতে পারে। খলিফা হয়তো কিছু বেশি পরিমাণে ভাতা গ্রহণ করতে সম্মত হতেও পারেন। তাই তারা সবাই মিলে তাঁর কন্যা হযরত হাবসাকে জানলেন।

সুযোগ বুঝে হযরত হাবসা পিতার কাছে কথাটা বললেন। তিনি বললেন, আব্বা, আপনি আরব সাম্রাজ্যের বাদশাহ। কিন্তু বাদশাহর মত আমাদের তেমন কিছুই নেই। না বাড়ি-ঘর, না পোশাক-পরিচ্ছদ, না চাকর-বাকর, না অন্য কিছু। খুব দুঃখ-কষ্টের দিয়েই আমাদেরকে দিন কাটাতে হয়। আপনি ইচ্ছে করলেই ভাতার পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে পারেন। তাহলে সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আসবে, আমাদের জীবনটা কিছুদিন শান্তিতে কাটাতে পারি।

হযরত ওমর (রাঃ) কন্যার কথা শুনে কিছুক্ষণ নীরব থেকে ধীরে ধীরে জবাব দিলেন, এই কথা নিশ্চয় তোমার নিজের মন থেকে নয়। কেউ হয়তো পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু মা, আমাদের তেমন কোন অভাব তো নেই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জামা-কাপড়, আসবাবপত্র, শয্যাদ্রব্য, চলাফেরা সব কিছুই তো জানো মা। আমি তার চেয়ে অধিক বিলাসী হতে পারব না।

হযরত হাবসা পিতার কথা শুনে খুবই লজ্জিত হলেন। তিনি তাকে পুনরায় অনুরোধ করতে সাহস পেলেন না।

হযরত আবু ওমর (রা.) মৃত্যু:

হযরত ওমর (রা.) ১০ বছর ৬ মাস ৪ দিন খলিফা থাকার পর শুক্রবার সকালে ৬৪৪ সনের ৩রা নভেম্বর  আবু লুলু বলে এক পার্সিয়ান দাসের চুরির আঘাতে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু কালে হযরত ওমর (রা.) এর বয়স ছিলে আনুমানিক ৬০ অথবা  ৬১ বছর।

সাহাবিদের জীবনী পড়তে ও ক্রয় করতে ভিজিট করুন >>>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright ©2024 All rights reserved | www.islamiczone.org | Develop by www.kictbd.com | Newsphere by AF themes.