Islamic Zone

islamic zone

হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ. সংক্ষিপ্ত জীবনী।

1 min read
হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী

হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী

হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ. সংক্ষিপ্ত জীবনী।

হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন

জন্মকাল এবং বংশ পরিচয়ঃ

সিস্তানের অন্তর্গত সঞ্জর গ্রামে হিজরী ৫৩৬ সনের ১৪ই রজবের এক উজ্জল প্রভাতের শুভ মুহূর্তে যুগ যুগান্তের আলোকবার্তা বহন করিয়া জগতে আগমন করিল একটি ছোট্ট শিশু। এই শিশুর নাম খাজা মুঈনুদ্দীন হাছান সঞ্জরী।

খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ. এর পিতার নাম  গিয়াসউদ্দীন হাছান রহ.। তিনি ছিলেন সিস্তানের অন্তর্গত সঞ্জর গ্রামের অধিবাসী। তিনি একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। অঢেল ধন-সম্পদের মালিক ছিলেন তিনি। তবে শুধু ধন-সম্পদই তাহার কাম্য ছিল না। তিনি ছিলেন একজন মহাজ্ঞানী ও মহাসাধক। দিবাবাগে তিনি ব্যবসা করিতেন আর রাতের বেলা আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকিতেন। ভক্তবৃন্দ তাহার সান্নিধ্য লাভ করিয়া ধন্য হইত।

খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. মাতা সাইয়েদুর উম্মুল ওয়ারাও ছিলেন খোদা ভক্ত, সতী সাধ্বী রমণী সংসার কার্য পরিচালনা, স্বামীর খেদমত, ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন ও আল্লাহর ইবাদত ব্যতীত তাহার আর কোন কাজ ছিল না। খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. পিতৃকুল ও মাতৃকুল ইভয় দিক হইতেই তিনি ছিলেন সাইয়্যেদ বংশীয়।

শিক্ষা জীবনঃ

যে ব্যক্তি এলমে দ্বীন শিক্ষার উদ্দেশ্যে বাহির হয়, ফিরিয়া আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথেই থাকে। 
এলেম শিক্ষা করার বিপুল তৃষ্ণা অন্তরে নিয়া খাজা খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ. ঘড়বাড়ী ত্যাগ করিয়া 
প্রথমে তিনি সমরখন্দে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

তৎকালে সমরখন্দ ও বোখারা ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র হিসাবে বিখ্যাত ছিল। বহু চিন্তাশীল দার্শনিক মুহাদ্দেছ ফকিহ এবং পন্ডিতগণ তথায় বসবাস করিতেন।

খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. প্রথমে সেখানে কোরআন শরীফ মুখস্ত করিলেন। অতঃপর তাফসীর, হাদিস, ফেকাহ, ওসুল, মান্তেক ইত্যাদি বিষয় শিক্ষাগ্রহণ করিলেন। তাহার স্মৃতি শক্তি ছিল অতি প্রখর। সুতরাং কুরআন শরীফ হেফয করিতে তাফসীর, হাদিস ইত্যাদি শিক্ষা করিতে তাহার খুব অল্প সময়ই লাগিয়াছিল। একনিষ্ঠ ভাবে সাধনা ও অধ্যাবসায়ের ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি অতিশয় দক্ষতা অর্জন করিলেন।

যাহেরী বিদ্যায় পারদর্শিতা ভাল করিয়াও তাহার তৃষ্ণাতুর মনের জ্ঞান পিপাসা নিবৃত্ত হইল না।  আধ্যাত্নিক জগতের জ্ঞান অর্জনের আকাঙ্খায় তিনি বোখারা হইতে  আবার নিরুদ্দিষ্ট পথে যাত্রা করিলেন।

খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. এর  বিবাহঃ

খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. পূর্ণ জীবনটাই জেহাদ ও ইসলাম প্রচার কার্যে ব্যয়িত হইয়াছে। কর্ম জীবনের এই একনিষ্ঠ সাধনার মধ্যে তিনি কখনও নিজের সম্পর্কে চিন্তা করিবার অবসর পান নাই। বিবাহ, ঘড়-সংসার এসব ছিল তাহার কল্পনার বাইরে। কিন্তু একদা একটি ঘটনা ঘটিল-

একদা গভীর রাত্রে নিদ্রা মাঝে খাজা সাহেব স্বপ্নে দেখিলেন, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (স) তাহাকে নির্দেশ দিতেছেন- মুঈনুদ্দীন তুমি আমার দ্বীনের সাহায্যকারী বটে কিন্তু আমার একটি সুন্নত তুমি এখনও পালন কর নাই। উহাকে তুমি একেবারেই পরিত্যাগ করিয়াছ।

স্বপ্ন দেখিয়া খাজা সাহেব ভাবনায় পড়িয়া গেলেন। অবশেষে বুঝতে পারলেন, তিনি বিবাহ করেন নাই। বিবাহ রাসূলুল্লাহ (স) এর রীতি। বিবাহ না করিয়া বৈরাগ্য অবলম্বন করিবার আদেশ ইসলামে নাই।

খাজা সাহেব চিন্তায় পড়িয়া গেলেন, এই বৃদ্ধ বয়সে তাহার নিকট কে মেয়ে বিবাহ দিবে। কেননা ইতিমধ্যেই জীবনের নব্বই বৎসর তাহার অতিক্রান্ত হইয়া গিয়াছে। এই বয়সে কোন বৃদ্ধের নিকট কোন পিতা জানিয়া- শুনিয়া কন্যা দান করে না। জীবনের যে কঠোর তপস্যা ও সাধনার পথ তিনি বাছিয়া নিয়াছিলেন, তাহাতে ঘর-সংসারের কথা চিন্তা করাও তাহার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবুও রাসূলুল্লাহ (স) আদেশ পালনের তাকীদে তিনি নিশ্চুপ থাকিতে পারিলেন না। তিনি বিবাহের এরাদা নিয়া আল্লাহর উপর ভরসা করিয়া রহিলেন।

পটলীদূর্গের শাসনকর্তা মালিক খাত্তাব খাজা সাহেবের মুরীদ ছিলেন। দূর্গের পার্শ্ববর্তী এলাকার সামন্ত রাজারা ছিল অমুসলিম। ইহারা ভীষণ মুসলিম বিদ্বেষী ছিল। অমুসলীম সামন্ত রাজারা যে কোন সময়ে দূর্গ আক্রমণ করিতে পারে, এই আশংকায় মালিক খাত্তাব নিকটস্থ সামন্ত রাজার রাজ্য আক্রমণ করিলেন। যুদ্ধে সামন্ত রাজার পরাজয় ঘটে এবং সামন্ত রাজার কন্যা খাত্তাব বাহিনীর হাতে বন্দী হন। মালিক খাত্তাব সামন্ত রাজার কন্যাকে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. খেদমতে বাদী হিসাবে প্রেরণ করেন। কিন্তু খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. তাহাকে বাদী হিসাবে গ্রহণ না করিয়া, তাহাকে সহধর্মিনীর মর্যাদা দিয়া বরণ করিয়া নেন। এবং খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. পরবর্তীতে আর একটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর সন্তান সন্তুতিঃ

খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ.  কোন সন্তান সন্তুতি ছিল কিনা সে সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে দ্বিমত রহিয়াছে। কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে তাহার কোন সন্তান ছিল না। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে সন্তান সন্তুতি ছিল। তাহার তিন পুত্র এবং এক কন্যা ছিল। পুত্রদের নাম ছিল- ১. আবু সাইদ খাজা ফকরুদ্দীন ২. আবুল খায়ের জিয়াউদ্দীন ৩. শায়েখ হুচ্ছামুদ্দীন। আর কন্যা সন্তানের নাম ছিল বিবি হাফেজ জামাল।

খাজা ফকরুদ্দীন একজন বুর্যগ ও কামেল ওলী ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি ত্রিশ বছর জীবিত ছিলেন। তাহার দ্বারাই খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. এর বংশ বিস্তার লাভ করে।

শায়েখ হুচ্ছামুদ্দীন রহ. কামেল ওলী ছিলেন। তাহার অলৌকিক ক্ষমতা সর্বজ্ঞাত ছিল। বাংলাদেশের সাভারে এখনও মাযার বিদ্যমান আছে।

বিবি হাফেজ জামাল নামে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. এর একটি কন্যা সন্তান ছিল। খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ. নিজেই তাহাকে শিক্ষা দান করিয়াছিলেন। বিখ্যাত ওলী শায়েখ রাযী রহ. ছিলেন তাহার স্বামী। বোর্যগ পিতার শিক্ষা ও সান্নিধ্যের ফলে বিবি হাফেজ জামাল কামালিয়াতের উচ্চ শিখরে পৌছিয়াছিলেন।

খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর সাধনাঃ

খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর রহ. বিশেষত্ব ছিল তাহার সাধনায়। কৈশোরে হযরত ইব্রাহীম কানদুষী রহ. প্রদত্ত রুটির টুকরাটি ভক্ষণ করার পর সাধনা জগতে বিচরণের যে উম্মত আকাঙ্খা তাহাকে পাইয়া বসিয়াছিল, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাহা কখনও নিবৃত্ত হয় নাই। আত্যাধিক পরিশ্রম অসহনীয় কষ্ট ও অবর্ণনীয় ত্যাগ স্বীকার করিয়া তিনি এই জগতে বিচরণ করিয়াছিলেন।

হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীর রহ. বর্ণনায় জানা যায় খাজা সাহেব আশ্চর্যজনক রিয়াজত সাধনা করিতেন। বৎসরের অধিকাংশ সময় তিনি রোযা রাখিতেন। কখনও কখনও তিনি সপ্তাহকাল ধরিয়াও কিছু ভক্ষণ করিতেন না। তিনি সব সময় অযু অবস্থায় থাকিতেন। বর্ণিত আছে  খাজা সাহেব একাধারে সত্তর বছর পর্যন্ত এশার নামাজের ওযু দিয়া ফজরের নামাজ আদায় করিয়াছেন। দিনের বেলা প্রায়ই তিনি রোজা রাখিতেন।

রাতের বেলা সারা রাত জাগিয়া এবাদত করিতেন ও পবিত্র কোরআন এবং ওযীফা তেলাওয়াত করিতেন। তিনি যখন ভাব সাগরে ডুবিয়া থাকিতেন তখন বাস্তব জগতের কোন খেয়ালই  তাহার থাকিত না।

খাওয়া পরার জন্য খাজা সাহেবের কোন চিন্তাই ছিল না। ক্ষুধাকে তিনি সম্পূর্ণরুপে আয়ত্ত করিয়া নিয়াছিলেন। ইফতার না করিয়া একাধারে সাত দিন পর্যন্ত রোযা রাখিলেও তিনি কষ্টবোধ করিতেন না। দিনের পর দিন রোযা রাখার পর ইফতারের নিয়াতে হযত শুকনা রুটির একটি টুকরা পানিতে ভিজাইয়া রাখিতেন এবং উহা দ্বারা ইফতার করিতেন।

বর্ণিত আছে খাজা সাহেব সর্বদা নিতান্ত সাধারণ আরবীয় পোশাক পরিধান করিতেন। উহা ছিড়িয়া গেলে তিনি নিজেই সেলাই করিয়া লইতেন। তালির পর তালি দিয়া তিনি উহা পরিধান করিতেন।

খাজা সাহেব দয়া ক্ষমা ধৈর্য ইত্যাদি সকল প্রকার মহাগুনের অধিকারী ছিলেন। এক কথায় তাহার নাম ছিল দয়ার খাজা। কেহ অপরাধ করিলে তিনি আগুনের মত গরম হইতেন, কিন্তু ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে সাথে আবার ফুলের মত কোমল হইয়া ক্ষমা প্রদর্শন করিতেন।

বর্ণিত আছে, একদা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহ. কে হত্যা করিবার উদ্দেশ্য এক ব্যক্তি তাহার দরবারে আগমন করে। লোকটির হিংসা হইয়া ছিল যে, একজন বিদেশী মুসলমান ফকির কারামত দেখাইয়া এইভাবে খাজা সাহেবের প্রতি ব্যক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করিতে লাগিল। খাজা সাহেব অন্তদৃষ্টি বলে সবকিছু পূর্বাহেই জানিতে পারিয়াছিলেন। তিনি ইচ্ছা করিলে এই কপট শত্রুকে মুহূর্তেই শেষ করিয়া ফেলিতে পারিতেন। কিন্তু তিনি তাহা না করিয়া অতি আদর করিয়া পরম যত্নে তাহাকে কাছে বসাইলেন। বলিলেন বাবা! তুমি যেই উদ্দেশ্য নিয়া এত কষ্ট শিকার করিয়া আসিয়াছ তাহা গোপন করিয়া রাখিতেছ কেন? এই নাও আমি প্রস্তুত।

তোমার কাজ শেষ করিয়া ফেল। শুনিয়া লোকটির অন্তর গলিয়া গেল। কিছুক্ষণ পর্যন্ত সে কোন কথাই বলিতে পারিল না। যে লোক অন্তদৃষ্টি বলে সবকিছু জানিয়া শত্রুকে পাশে বসাইতে পারেন, যাহার মুখের কথা এত মধুময় তাহাকে হত্যা করে কাহার সাধ্য। অতঃপর লোকটি অনুতপ্ত হইয়া খাজা সাহেবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিল। খাজা সাহেব বলিল তোমাকে শাস্তি দেওয়ার ইচ্ছা আমার নাই। যাও তোমাকে আমি ক্ষমা করিয়া দিলাম। তুমি মুক্ত। আমার তরফ হতে তোমার ভয়ের কোন কারণ নাই। খাজা সাহেবের কথায় আগন্তুক ঘাতকের পাষাণ মন গলিয়া গেল। তাহার অন্তর উজ্জল হইয়া উঠিল। সে তওবা করিয়া সত্য ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করিলেন।

 

  • হযরত খাজা মুঈনুদ্দীনহযরত খাজা মুঈনুদ্দীনহযরত খাজা মুঈনুদ্দীনহযরত খাজা মুঈনুদ্দীনহযরত খাজা মুঈনুদ্দীনহযরত খাজা মুঈনুদ্দীনহযরত খাজা মুঈনুদ্দীনহযরত খাজা মুঈনুদ্দীনহযরত খাজা মুঈনুদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright ©2024 All rights reserved | www.islamiczone.org | Develop by www.kictbd.com | Newsphere by AF themes.