Islamic Zone

islamic zone

হযরত দাউদ (আঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী।

1 min read
হযরত দাউদ (আঃ)

হযরত দাউদ (আঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনী।

সূচনাঃ

হযরত দাউদ (আঃ) ছিলেন একজন ঐশী বার্তাবাহক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত পয়গম্বর । তিনি যেমন ছিলেন তিক্ষ্ণ বুদ্ধি সমপন্ন তেমনি ছিলেন একজন অকুতোভয় বীর, সাহসী সৈনিক। তার বীরত্বের কারণেই বনী ইসরাইলগণ তালূতের অধীনে থেকে জালূতকে পরাস্ত করে। তিনি যেমনি ছিলেন খোদায়ী বার্তাবাহক তেমনি ছিলেন পৃথিরাজ তথা একজন সুপ্রতিষ্ঠিত আদলে ও ন্যায় বিচারক বাদশাহ। বনী ইসরাইল বংশীয় নবী রসূলের মধ্যে তিনিই ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী। কেননা আল্লাহপাক তাকে নবুয়্যাত ও রাজত্ব উভয়টি দান করেছিলেন। তিনি ব্যতীত আর কাউকে এ সম্মান ভুষিত করা হয়নি।

হযরত দাউদ (আঃ)-এর জন্মঃ

বনী ইসরাইল বংশীয় নবী হযরত শাম্বীল (আঃ)-এর নবুওয়াতকালে ফিলিস্তীন অদিবাসী ইশা বা ঈশীয় বাধ্যকের সময় এক পুত্র সন্তান লাভ করেন। ঈশার সন্তান ছিল অনেক। কিন্তু শেষ বয়সের সন্তান হওয়ায় হযরত দাউদ (আঃ) ছিলেন বাবা ঈশার অত্যান্ত স্নেহভাজন। তার প্রতি ঈশার অধিক অনুরাগ অনান্য সন্তানদের ঈর্ষার কারণ ছিল। তবুও তার লালন-পালন, স্নেহ অনুরাগের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হত না। যাই হোক হযরত দাউদ (আঃ) অত্যান্ত আনন্দে- আহলাদে বেড়ে উঠতে লাগলেন।

হযরত দাউদ (আঃ)-এর শিক্ষাঃ

হযরত দাউদ (আঃ) এর বাবা ছিলেন একজন ইসরাইলী ধর্মযাজক। তাই ছোট থেকেই তিনি বাবা-মায়ের স্নেহের পাশাপাশি পিতার থেকেই একত্ববাদের শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং ছোটবেলা হতেই তিনি স্বীয় ধর্ম পালনে অত্যান্ত ব্রতী হয়ে পড়েন। তার বয়স যতই বাড়ছিল ধর্মের প্রতি তার অনুরাগ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তাইতো তিনি পরবর্তীকালে আল্লাহ তাআলার একান্ত আপন ও ঘনিষ্ঠের অন্তভূক্ত হয়ে পড়েন।

হযরত দাউদ (আঃ)-এর গঠনঃ

হযরত দাউদ (আঃ) ছিলেন দেখতে খুবই চমৎকার। তিনি ছিলেন খর্বকায় ও বেটে। তার দেহ মুবারক ছিল ক্ষুদ্রাকৃতির। তার আখিযুগল ছিল নীল বর্ণের। মনে হতো যেন আকাশী রঙে সজ্জিত করা হয়েছে উহাদেরকে। তার পবিত্র দেহে লোম ছিল খুবই অল্প। তার গায়ের রং ছিল কালো বাদামী। চুলগুলো ছিল কুচকুচে কালো। গোটা শরীর ছিল খোদায়ী প্রদত্ত তৈলে সিক্ত। যুদ্ধক্ষেত্রে তাকে দেখা যেত ক্ষুধার্ত বাঘের ন্যায়। তার চাহনী ছিল অত্যন্ত সুক্ষ্ণ ও নিশানাভেদী। আকষ্মিক কেউ তাকে দেখলে ভয় পেয়ে যেত। বার বার কেউ তার দিকে তাকালে অবশ্যই তাকে ভালোবেসে ফেলত।

হযরত দাউদ (আঃ)-এর বিবাহঃ

কোন কোন ইসরাইলী রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, জালূতের প্রবল শক্তি ও বনী ইসরাইলীদের ইতস্তঃভাব দেখে তালূত ঘোষণা করেছিলেন যে, যে ব্যক্তি জালুতকে হত্যা করতে পারবে, তার সাথে আমার মেয়ে সীকাহর এর বিয়ে দিব এবং তাকে রাজত্বের অর্ধেক দান করব। অনন্তর হযরত দাউদ যখন জালূতকে হত্যা করলেন, তখন তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার সাথে সীকাহর বিবাহ দিলেন এবং স্বীয় রাজত্বের অর্ধেক তাকে দান করলেন।

যাবূর তিলাওয়াতঃ

আল্লাহ তাআলা হযরত দাউদ (আঃ) এর জন্য যাবূরের তেলাওয়াতকে এত সহজ করে দিয়েছিলেন যে, তিনি যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই যাবূর তিলাওয়াত করতে পারতেন। তাইতো বোখারী শরীফের কিতাবুল আম্বিয়াতে বর্ণিত আছে যে, হযরত দাউদ (আঃ) যাবূর কিতাবকে এত সংক্ষেপ সময়ে তিলাওয়াত করতে পারেন যে, যখন তিনি ঘোড়ার পিঠে গদি বাঁধতে শুরু করতেন , তখন যাবূর তিলাওয়াত আরম্ভ করে দিতেন এবং বাঁধা শেষ হওয়ার সাথে সাথে যাবূর তিলাওয়াত ও শেষ হয়ে যেত।

হযরত দাউদ (আঃ)-এর মুযেজাঃ

ধারার বিপরীতে কোন জিনিস ঘটে যাওয়া যেমন আশ্চর্যের তেমনি বিষ্ময়করও বটে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় নেক বান্দাদের মাধ্যমে কখনো কখনো এ ধরণের আশ্চর্যের আর্বিভাব ঘটিয়ে থাকেন। আর ধারার বিপরীতে প্রকাশ পাওয়া এই বিষয়গুলো যদি কোন আউলিয়ায়ে কেরাম হতে প্রকাশ পায় তবে উহাকে বলা হয় কারামত। আর যদি তা কোন আম্বিয়াতে কেরামতের থেকে প্রকাশ তবে উহাকে বলা হতো মুযেজা। বিশ্বনবী সাইয়েদুল মুরসালীন (সঃ) এর মাধ্যমেই মুযেজার দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তার পরে আসবেন না কোন নবী ও পয়গম্বর। তাই প্রকাশও পাবেনা কোন মুযেজা। তবে কারামতের দরজা রুদ্ধ নয় বরং তা খোলা থাকবে কিয়ামত পযন্ত। আল্লাহ তাআলার স্বীয় বান্দা ও খলীফা হযরত দাউদ (আঃ) এর মাধ্যমে একাধিক মুযেজার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। যেমনঃ- পাখির সাথে কথোপকথন, লৌহকে মোমে পরিণত করা। এছাড়াও তিনি যখন যাবূর তিলাওয়াত ও জিকির আসকারে মশগুল হতেন তখন পাহাড়-পর্বত ও পাখিসমূহ তার মিষ্টি মধুর আওয়াজ শুনে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না বরং তারাও হযরত দাউদ (আঃ) এর সাথে জিকির আযকারে লিপ্ত হয়ে যেত।

হযরত দাউদ (আঃ) এর কর্ম পদ্ধতিঃ

হযরত দাউদ (আঃ) এর কর্ম পদ্ধতি ছিল অত্যান্ত চমৎকার এবং পরবর্তী  বংশধরদের জন্য অনুকরণীয়। তিনি তার কার্যসমূহকে চার ভাগে ভাগ করে উহাকে চার দিনে আদায় করতেন। একদিন শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্য সেদিন তিনি অন্য কোন কাজ করতেন না। শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতেই কাটিয়ে দিতেন। দ্বিতীয় দিনে এই বিশাল সাম্রাজ্যের সকল মোকাদ্দমার মীমাংসা প্রদান করতেন। তৃতীয় দিন ব্যক্তিগত কাজের জন্য। এদিন তিনি স্বীয় জীবন যাপনের জন্য অন্নের ব্যবস্থা করতেন এবং নিজ হাতে লৌহ বর্ম তৈরি করে তা বাজারে নিয়ে বিক্রি করত জীবিকার ব্যবস্থা করতেন। চতুর্থ দিন দেশব্যাপী নবী ইসরাইলীদের হেদায়েতের জন্য ওয়াজ নছীয়ত ও সদুপোদেশ দানে ব্যাপৃত থাকতেন।

হযরত দাউদ (আঃ) এর পবিত্র বয়সঃ

হযরত দাউদ (আঃ) এর আয়ূষ্কাল সম্পর্কে যদিও নিশ্চিতভাবে কোন কিছু বলা যায় না। কিন্তু অনুমান করা যায় যে তার পবিত্র বয়স একশত বছর হয়েছিল। যা মিশকাত হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিস দ্বারা বুঝা যায়।

হাদিসটি এই – হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যখন ঊর্ধ্ব জগতে হযরত আদম (আঃ) এর পিঠ হতে তার পরবর্তী সমূদয় বংশধরদেরকে বের করে তার সম্মুখে উপস্থাপন করা হল, তখন তিনি উহার মধ্যে একটি সুশ্রী ও দীপ্তিমান চেহারা বিশিষ্ট ব্যক্তি দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ওহে মাবুদ! এই লোকটি কে? উত্তরে বলা হলো সে তোমার বংশধরদের মধ্য হতে অনেক পরে দুনিয়ায় আগমণ করবে, তার নাম দাউদ। তখন হযরত আদম (আঃ) পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন তার আয়ুস্কাল কত হবে? ইরশাদ হলো ষাট বছর।

তখন হযরত আদম (আঃ) বললেন প্রভু হে! আমার আয়ুস্কাল হতে চল্লিশ বছর আমি এই ব্যক্তিকে দান করে দিচ্ছি। কিন্তু যখন হযরত আদম (আঃ) এর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো তখন তিনি মালাকুল মাউতকে বললেন আমারতো আরও চল্লিশ বছর বাকি আছে তখন মালাকুল মাউত বললেন আপনি কি ভুলে গেছেন যে আপনি আপনার আয়ূস্কাল হতে এ পরিমান বয়স আপনার সন্তান দাউদকে দান করেছিলেন।

এ বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, হযরত দাউদ (আঃ) এর বয়স মুবারক একশত বছর পূর্ণ হয়েছিল। এবং হযরত দাউদ (আঃ) এর মৃত্যুর বর্ণনা দিতে গিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, কোন এক শনিবারে আচমকা তার ইন্তেকাল হয়। তিনি তখন ছিলেন ইবাদতে মশগুল ছিলেন।

এ ঘটনা থেকে আমরা যা শিখলামঃ

আল্লাহ তাআলা যখন কাউকে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী করেন এবং তার ব্যক্তিত্বকে বিশেষ মর্যাদায় সম্মানিত করার ইচ্ছা পোষণ করেন তখন তার স্বভাবজাত যোগ্যতাসমূহকে বাল্যকাল হতেই দীপ্তমান করে তুলতে থাকেন এবং উহা তার ললাটে দীপ্তিমান নক্ষত্রের ন্যায় উজ্জল পরিদৃষ্ট হতে থাকে। যেমন হযরত দাউদ (আঃ) কে যখন পয়গম্বর ও উচ্চ শ্রেণীর রাসূল মনোনীত করা আল্লাহ তাআলার অভিপ্রায় ছিল। তাই আল্লাহপাক তার জীবন ধারার প্রথম ধাপেই জালূতের হত্যার মাধ্যমে তার বীরত্ব ও সাহসিকতাকে মানুষের মাঝে ফুটিয়ে তুললেন।

আরো নবীদের জীবনী পড়তে ভিজিট করুন>>>

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright ©2024 All rights reserved | www.islamiczone.org | Develop by www.kictbd.com | Newsphere by AF themes.